টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ফসলের মাঠে মাঠে দুলছে হলুদ বর্ণের সরিষা ফুল। একনজরেই যেন গাঢ় হলুদ বর্ণ ফুলের সমারোহে চোখ জুড়িয়ে যায়। শীতের সূচনালগ্ন থেকেই দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সবেমাত্র উঁকি দিতে শুরু করেছে সদ্য ফোঁটা সরিষা গাছের হলুদ রঙের ফুলগুলো। দূরদূরান্ত থেকে গ্রামের মেঠোপথ ধরে প্রকৃতিপ্রেমীরা মনোরম এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন। অপরূপ এই প্রকৃতির সাথে নিজেকে মেলে ধরতে তুলছেন রঙবেরঙের ছবি। আর সেই প্রকৃতির সাথে হাসছে মন মাতানো, নয়ন জুড়ানো হলুদ রঙের সরিষার ফুল। আর এই সরিষা ফুলের সাথেই যেন মিশে আছে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর হাজারো কৃষকের রঙিন স্বপ্ন।
জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে সরিষা চাষে লাভের স্বপ্নে বিভোর উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর শহরের কয়েক হাজার কৃষক। দিনে দিনে বাজারে ভোজ্যতেলের দাম মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে সরিষার তেলের চাহিদাও যেন অনেকাংশে বেড়ে গেছে। এতে করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে লাভের আশায় সরিষা চাষের মধ্য দিয়ে স্বপ্ন বুনছেন কৃষকেরা। সরিষা আবাদে খরচের পরিমাণ সীমিত হওয়ায় দিনে দিনে এ উপজেলায় সরিষার আবাদও বাড়ছে বহুগুণ।
ধনবাড়ী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলার ৭ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর সভায় বারি-১৪ ও বারি-১৫ সহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ২ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ আরো বাড়তে পারে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও দেশীয় জাতের রাই, চৈতা ও মাঘি সরিষার চাষ করছেন কৃষকরা। তবে প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি -১৫ ফলন বেশি হওয়ায় এ দুই জাতের সরিষা চাষ বেশি হয় বলে জানান কৃষকেরা।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, আমাদের এলাকায় সরিষা আর ভুট্টার আবাদই বেশি হয়। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে ফলন ভাল হবে বলে আশা করছি। আর ফলন ভাল হলে তো অবশ্যই আমরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হব।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর সরিষার আবাদ একটু কম হয়েছে। কারণ গত বছরের চেয়ে এবছর পিঁয়াজের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। তারপরেও সরিষার আবাদ আরো বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের সব ধরণের সহযোগিতা ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে ভুট্টার জমিতে, রাস্তার পাশে, পুকুরপাড়, ফল বাগানসহ যে কোনো পতিত জায়গায় অন্যান্য ফসলের সাথে যেন সরিষার চাষ করা হয়, এ জন্যও কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির মাধ্যমে বীজ ও সার দেয়াসহ সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।