সেহেরির পরপরই গরু জবাই হয়েছে। চামড়া ছাড়ানো থেকে শুরু করে মাংস কাটা মাপ যোগে ব্যস্ত কিছু উদ্যোমী। এটি কোরবানির ঈদের আয়োজন না হলেও আমেজটা অনেকটা সে রকমই।
আসন্ন ঈদুল ফিতর কেন্দ্র করে বাড়িতে বাড়িতে মাংস নিশ্চিতের জন্য টাঙ্গাইলের মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলার পাড়ায় পাড়ায় এমন দৃশ্য। বেশ কয়েক বছর যাবৎ এমন চিত্র স্বাভাবিক ও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর নাম সমবায় পদ্ধতির মাংস সমিতি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি ঈদুল ফিতর শেষ হওযার পরের সপ্তাহ থেকে মাংস সমিতির হিসাব শুরু হয়। বছর ব্যাপি এই সমিতির প্রত্যেক সদস্য সপ্তাহে ১০০ টাকা করে জমা দেন। মাসিক হারেও জমার বিধান কোনো কোনো সমিতির। মাংসের দাম বাড়ায় সবার ঘরে মাংস নিশ্চিতের এ কৌশল অবলম্বন করেছেন গ্রামের মানুষ। আর এতে সাধ্যের মধ্যে তাদের খাবারের থালায় মাংসের টুকরো সহজে স্থান পায়।
অনেক পরিবার রয়েছে যাদের একবারে দুই থেকে তিন কেজি মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। তাই সাপ্তাহিক ১০০ টাকা করে সারা বছর জমা রেখে ঈদুল ফিতরের ৫-১০ দিন আগে থেকে গরু জবাই করে মাংস ভাগের ধুম পড়ে। আর সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকায় ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত মাংস পেয়ে থাকেন প্রতি সদস্য। আর এ কারণে গ্রামের মানুষ এটাকে মাংস সমিতি নামকরণ করেছেন।
মাংস সমিতি সংশ্লিষ্টরা জানান, একবারে টাকা গুছিয়ে ৮-১০ কেজি মাংস কেনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এই কৌশল অবলম্বন করে যা সহজে সম্ভব। তা ছাড়া সপ্তাহে ১০০ টাকা রাখতে তেমন কষ্ট হয় না। এ মাংস সমিতিটা এখন বিভিন্ন গ্রামের পাড়া–মহল্লায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।’
ধনবাড়ী উপজেলার পৌর শহরের ৮ নং ওয়ার্ড এর বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমরা মাংস সমিতি করে সাড়ে চার হাজার টাকা হারে জমা করেছিলাম। গরু কিনে জবাই করে প্রতিজন ৮ থেকে ৯ কেজি করে মাংস পেয়েছি। মাসে ৩০০ টাকা করে জমা দিতে আমাদের বেগ পেতে হয়নি।কিন্তু একবারে ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকার মাংস কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
আব্বাস বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের পরের সপ্তাহ থেকে টাকা উত্তোলন শুরু হয়। এটা আমাদের এক বছরের হিসাব। যতজন সদস্য হবে, প্রত্যেককে ৩০০ টাকা করে দিতে হয়। ঈদুল ফিতরের আগে নিজের পছন্দমতো গরু কিনে জবাই করে মাংস ভাগ করে নিই। এতে যেমন আমরা সুস্থ গরুর মাংস পাই, অপরদিকে আমাদের একবারে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকার যে কষ্ট, সেটা হয় না।’
ধনবাড়ীর পাইস্কা গ্রামের মো. মোতালেব হোসেন বলেন, সাড়ে ১২ হাজার টাকা করে সমিতি করে এবার মাংস পেয়েছি ১৯ কেজি ও ভুঁড়ি ৩ কেজি।
মধুপুরের কুড়াগাছা বাজার এলকার ব্যবসায়ী সোহরাব হোসেন জানান, ওই বাজারে অন্তত চারটা সমিতি আছে। ঈদের আগের রাতে গরু কাটার ধুম পড়ে যায়।
কাকরাইদ বাজার এলাকার সামিউল আলম, ফারুকসহ অনেকে জানান, ‘বর্তমানে আমাদের এখানে গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজি, মহিষের মাংস একটু বেশি। খাসির মাংস হাজার টাকার উপরে। সে ক্ষেত্রে আমাদের সমিতির মাধ্যমে যে গরু কিনি, সেটার মাংস ৬০০-৬৫০ টাকা কেজি পড়ে।’ এভাবে প্রায় এক দশক ধরে চলছে এসব সমিতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দুই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে দিন দিন এই মাংস সমিতি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এবং সাথে বিস্তৃতি লাভ করছে।
মধুপুর পৌর শহরের মাংস ব্যবসায়ী ছানা, আরিফ,ফজলুল হক ও ধনবাড়ী বাজারের মাংস ব্যবসায়ী ফটু হোসেনের সাথে কথা হয়। তারা জানান,, ‘ঈদুল ফিতরে মাংস বিক্রির যে টার্গেট থাকে সেটা সম্ভব হয় না এলাকার এলাকার এ সব মাংস সমিতির জন্য। রিক্স নিয়ে গরু কিনলে অনেক সময় লোকসান গুনতে হয়।
শালবনবার্তা২৪.কম/এসআই