"এমন কোনো চাকরি নেই,যে চাকরির বেতন নেই"
এটি কোনো কবিতার লাইন নয়।এটি কোনো প্রবাদও নয়।এটি নিছক কোনো বুলি নয়।এর অন্তরালে রয়েছে বাংলাদেশের অবহেলিত অথচ সবচেয়ে সম্মানিত পেশার মানুষের হৃদয়ের কষ্টের বহিঃপ্রকাশ।এটি একটি চোখের পানি মিশ্রিত স্লোগান।তিন যুগের অধিক সময় যাবৎ কখনো প্রেসক্লাবের সামনে আবার কখনো শাহবাগে শোনা যায় এই শ্লোগানটি।এই শ্লোগানটির ভেতর যে আবেগ রয়েছে তার গল্প প্রতিটি হৃদয়বান ব্যাক্তিকেই আপ্লুত করার কথা।কারণ এর ভেতর রয়েছে এক বিরাট বৈষম্যের কাহীনি।অথচ বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে দুই হাজারের অধিক প্রাণের বিনিময়ের পরও শুনতে হচ্ছে এই শ্লোগান।শিশুর মানষে জ্ঞানের আলো প্রস্ফুটিত করতে যেয়ে যারা আজ প্রায় বার্ধক্যে উপনীত এই শ্লোগানটি তাদের।৪২ বছর যাবৎ তারা শিক্ষকতার মহান পেশায় জড়িত অথচ অদ্যবধি পর্যন্ত মেলেনি কোনো বেতন এমন এক বৈষম্যের কথাই বলছি।"চাকরী আছে বেতন নাই এমন কোনো দেশ নাই" এমন শ্লোগানে মুখরিত ঢাকার প্রেসক্লাব।চলছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচী।এ আন্দোলনের তিন যুগ পারি হয়ে গেছে এখনো মেলেনি এমপিও বা জাতীয় করণ।বহু বছর পূর্ব হতে এ দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্থর ফোরকানিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। ২৫/১০/১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যাদেশ ১৯৭৮ ( (ordinance no ix of 1978) এর ১৭ (২) (বি) ধারার প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মাদ্রাসা শিক্ষার প্রাথমিক স্তর ফোরকানিয়া এবতেদায়ী মাদ্রাসা নামে পরিচালিত মাদ্রাসা সমূহ ও নতুন নতুন স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদরাসা সৃষ্টি করে ০১. ০১. ১৯৮৪ হতে মঞ্জুরী প্রদান শুরু করে।কোনো প্রকার বেতন ভাতার ব্যাবস্থা না করে ১৯৮৭ সালে তৎকালীন সরকার বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড হতে রেজিঃ প্রাপ্ত প্রায় প্রতিটি মাদরাসায় এককালীন ৪২০০/- ৭০০০/- টাকা প্রদান করে।তখন থেকেই স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতিপাত করে যাচ্ছে এবং বিনা বেতনে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে।দীর্ঘ দশ বছর পর ১৯৯৪ সালে ৪৫০০ ইউনিয়নের মধ্যে যাচাই বাছাই সাপেক্ষে ১৫১৯ মাদ্রাসাকে ৫০০ টাকা অনুদান প্রদান করা হয়।উল্লেখ্য বে-সরকারি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একই আদেশের বলে ৫০০/- টাকা অনুদান শুরু হয়েছিল । শিক্ষা মন্ত্রণালয় হতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদা হলে বে-সরকারি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সমূহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে চলে যায় । স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহ শিক্ষামন্ত্রণালয়ের আওতায় থেকে যায় । শিক্ষামন্ত্রণালয় স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহ দেখা শোনার দায়ীত্ব মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর(মাউশি) উপর অর্পণ করেন।২০১৪ সাল পর্যন্ত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) দেখা শোনার দায়ীত্ব পালন করেন।২০১২ সালে ডিসেম্বর মাসে জাতীয় প্রেসক্লাবর সামনে শিক্ষকগণ বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের ব্যানারে কাফনের কাপড় পরে আমরণ অনশন শুরু করলে ০৩ জানুয়ারী ২০১৩ সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির বেতন বৃদ্ধির আশ্বাসে শিক্ষকগণ আমরণ অনশন ভংগ করলে ২২ জানুয়ারী ২০১৩ শিক্ষকদের অনুদান ১০০০/- টাকায় উন্নিত করে । ঐ বছরের শেষে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) ডিসেম্বর মাসের অনুদানের সাথে ২০% মহার্ঘ ভাতা যোগ করে ১২০০/- অনুদান প্রদান করে। ২০১৫ সালের ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা শিক্ষক পরিষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর , মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর প্রেরিত মতামতের ভিত্তিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শাখা-২৪ (মাদরাসা-২) ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬ শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর , মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর যৌথ সভায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা নীতিমালা না থাকায় জাতীয় স্কেল প্রদান না করে অনুদান বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সে মোতাবেক সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপির সুপারিশ সাপেক্ষে সাবেক শিক্ষা সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন স্যারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় অর্থ মন্ত্রণালয় ২৯ মে ২০১৭ অনুদানভুক্ত ১৫১৯ টি মাদরাসার শিক্ষকদের মাসিক অনুদান প্রধান শিক্ষক ২৫০০/ ও সহকারি শিক্ষক ২৩০০/- নির্ধারন করে জিও জারি করে । জুন মাসের অনুদানের সাথে শিক্ষকগণ ( প্রধান শিক্ষক ২৫০০/ ও সহকারি শিক্ষক ২৩০০/-) টাকা উত্তলোন করেন ।
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর ২০১৮ সালে একটি গেজেট প্রকাশ হলেও অদ্যবধি পর্যন্ত স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসা সমূহের এমপিওর কোনো বাস্তবায়ন লক্ষকরা যায়নি।
অথচ সারাদেশে ৬৫৫৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করা হয়।এই বৈষম্যের শেষ কোথায়।আর কত রক্ত ঝড়ালে বাংলাদেশ বৈষম্যমুক্ত হবে।এই আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে টাংগাইল জেলার মধুপুর থেকে বানিয়াবাড়ী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আবু তাহেরের নেতৃত্বে ষাট জন শিক্ষক ঢাকার প্রেসক্লাবে যান।আবু তাহের সাহেবের নিকট হতে আন্দোলনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মধুপুরের প্রায় ৪৪ টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার বঞ্চনার কথা বলতে যেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে যান।শিক্ষকদের দাবী আর কোনো অনুদান নয়,সকল প্রকার বৈষম্য দূর করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ন্যায় স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে জাতীয়করণের আওতাভুক্ত করতে হবে।