উত্তরের মৃদু মন্দ ঠান্ডা হাওয়া জানান দিচ্ছে ধরায় শীত এসে গেছে। ফসলের মাঠে সরিষার হলুদ ফুলগুলো বাতাসে দুল খাচ্ছে। গ্রামের ঘরে ঘরে দেশীও পিঠার ঘ্রাণে পরিবেশ মো মো করছে। রাস্তাঘাটে ভাসমান পিঠার দোকান যেন শীতের আনন্দে নতুন পারদ যোগ করেছে। শীতকালে বিশেষ আকর্ষণ খেজুর রস। শীতকালের খেজুর রসের অনুষঙ্গ না পেলে যেন বাঙালির শীত অসম্পূর্ণ রয়ে যায়। শীতকাল আসলেই খেজুর রস পান করার অবাধ প্রতিযোগিতা আরম্ভ হয়। শীতের কুয়াশা জড়ানো ভোরে খেজুর রস পান করার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য চোখে পড়ে। ভোর হওয়ার সাথে সাথে গাছিরা মাথায় কিংবা বাইংয়ে ভর করে খেজুর রস নিয়ে গ্রাম-গঞ্জে হাজির হয়। সাম্প্রতিক সময়ে কাকডাকা ভোরে খেজুর রসের হাঁড়ি হাতে নিয়ে ফটো তোলা নতুন ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে। কাঁচা খেজুর রস কাঁচা পান করার পাশাপাশি খেজুর রস দিয়ে বিভিন্ন পিঠা পায়েস ও বিখ্যাত খেজুর গুড় তৈরী করা হয়।
খেজুর রসের মোহনীয় স্বাদ আস্বাদন করার লোভ সামলানো মুশকিল। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে যথাযথভাবে রস সংগ্রহ না করার ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকির তীব্র সম্ভবনা রয়েছে। কাঁচা খেজুর রসে নিপাহ ভাইরাস আতঙ্ক সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে। সাধারণ গাছিরা খেজুর রস সংগ্রহের সময় কাটা অংশ ও হাঁড়ি উন্মুক্ত রাখে ফলে নিশাচর বিভিন্ন বিপদজনক প্রাণী সেখানে রস পান করতে আসে। ফলে তাদের বিষাক্ত লালা খেজুর রসের সাথে মিশে নিরাপদ খেজুর রসকে বিপদজনক করে তোলে। নিশাচর প্রাণীদের মধ্যে বাদুড়ের উপদ্রব বেশী পরিলক্ষিত হয় এছাড়াও বেঁজি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আনাগোনা রসকে দূষিত বা পানের অনুপযোগী করে তোলে। অনিরাপদ এই রস পানে নিপাহ ভাইরাস আক্রমণ করে যা খুবই মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির উদ্রেক ঘটায়। দূষিত খেজুর রস কাঁচা অবস্থায় খেলে নিপাহ ভাইরাস সরাসরি মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হতে পারে। ফলে জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, বমি, ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। যা মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে।
এ থেকে পরিত্রাণের জন্য বিশেষজ্ঞরা আমাদের কাঁচা খেজুর রস পান করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ প্রদান করেন। রস পান করতে হলে অবশ্যই টগবগ করে ফুটিয়ে নিতে হবে। তবে খেজুর রসের তৈরি গুড় ক্ষতিকর নয়। এমনকি খেজুরের রসের রান্না করা পায়েস, ক্ষির ও বিভিন্ন রকমের পিঠা খাওয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। খেজুর রস সংগ্রহ ও সংরক্ষণের সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। সেই সাথে চেষ্টা করতে হবে যেন রস নিরাপদভাবে আহরন করা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, নিপাহ ভাইরাস থেকে নিস্তার পাওয়ার প্রধান উপায় হলো গাছ থেকে রস সংগ্রহের জায়গায় প্রতিরক্ষামূলক আবরণ বা স্যাপ স্কার্ট ব্যবহার করা। যেন বাদুড় ও অন্যন্য প্রাণী সংস্পর্শে আসতে না পারে। তবে আইসিডিডিআর’বির গবেষকরা গোপন ক্যামেরার মাধ্যমে দেখতে পেয়েছেন, রসের হাড়ির চারপাশ জাল বা স্যাপ স্কার্ট দিয়ে ঢাকা থাকলেও বাদুর কলসির মুখ বরাবর প্রস্রাব করে। ফলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকেই যায়। সুতরাং শীতের আমেজ যেন বিষাদে পরিণত না হয় সেজন্য আমাদের অবশ্যই খেজুর রস পানে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। একান্ত খেজুর রস পান করতে চাইলে বিশ্বস্ত সূত্র থেকে রস সংগ্রহ করা অথবা রস ফুটিয়ে পান করা যেতে পারে।