টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অন্যতম পুরনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিদ্যালয়টির ইতিহাসে প্রথম প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পুনর্মিলনী ।প্রাক্তন শিক্ষার্থী ফোরাম অর্ধশতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এই বিদ্যাপীঠের প্রায় ৫০টি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের একত্রিত করার লক্ষ্যে এ মিলনমেলার আয়োজন করেছে।
ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়—জ্ঞানের এক উজ্জ্বল বাতিঘর। ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কালের পথ বেয়ে আজ টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ী উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা বিস্তারে এক মহীরুহে পরিণত হয়েছে। বিদ্যালয়টি ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়নের প্রাণকেন্দ্রে, ধনবাড়ী–মধুপুর উপজেলার মধ্যবর্তী টাঙ্গাইল –জামালপুর মহাসড়কের পাশে এবং বংশাই নদীর তীরে অবস্থিত।
স্বাধীনতা পূর্বকালীন সময়ে এই অঞ্চল ছিল অবহেলিত ও শিক্ষা ক্ষেত্রে অনগ্রসর। চারপাশের ৫ থেকে ৭ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো উচ্চ বিদ্যালয় না থাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে এগিয়ে আসেন এলাকার প্রগতিশীল ও উদ্যমী তরুণরা। তাঁদের দ্বারা পরিচালিত তৎকালীন সামাজিক সংগঠন ‘ত্রিশক্তি সংঘ’ ১৯৬৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ওই দিন সংগঠনের তৎকালীন সভাপতি মো. আব্দুল মান্নানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভায় হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণে ঐক্যমতের ভিত্তিতে বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এরপর স্কুল বাস্তবায়ন কমিটি গঠনের মাধ্যমে ১৯৬৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয় স্থাপনে প্রয়োজনীয় জমি দিতে এলাকাবাসী স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসেন। ১৯৭২ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকে প্রথমবারের মতো শিক্ষার্থীরা মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে।
দীর্ঘ এই পথচলায় ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে দেশ ও সমাজের নানা ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন বহু কৃতী শিক্ষার্থী । সরকারি-বেসরকারি উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, পেশাজীবীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন।
আয়োজকরা জানান, এই পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রবীণ ও নবীন শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি দৃঢ় সেতুবন্ধন তৈরি হবে। স্মৃতিচারণ, আনন্দ-আড্ডা আর ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভাইঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসকে নতুন করে উদযাপন করাই এই মিলনমেলার মূল উদ্দেশ্য। মিলন মেলার মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও। মিলনমোলায় অংশ নিতে প্রায় দেড় সহস্র সাবেক শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করেছেন। তাঁদের জন্য প্রস্তুত বর্ণাঢ্য তথ্য সম্বলিত স্যুভ্যনিয়র "শিকড়"।
প্রথমবারের মতো আয়োজিত দিনব্যাপি এই পুনর্মিলনী কর্মসূচিকে ঘিরে ইতোমধ্যেই প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২৪ ডিসেম্বর বিকেল পর্যন্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে বিদ্যালয় ক্যাম্পাস জুড়ে চলছে কর্মযজ্ঞ।