৯৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী
আলোচনা ও দোয়া মাহফিলে নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীকে স্মরণ

- আপডেট সময় : ০৭:১৫:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫ ৮৭ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর নবাব পরিবারের নবাব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নবাব বাহাদুর সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর ৯৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী কবর জিয়ারত, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে পালিত হলো। এবারই ধনবাড়ীতে প্রথম আয়োজন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ধনবাড়ী আসিয়া হাসান আলী মহিলা ডিগ্রী কলেজ আইসিটি মিলনায়তনে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কলেজ অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) নুরুল ইসলাম পাঠান। প্রধান আলোচক ছিলেন কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি, সাবেক অধ্যক্ষ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম আজিজুর রহমান।
অনুষ্ঠানটির পরিচালনা করেন আসিয়া হাসান আলী মহিলা কলেজের ইংরেজির বিভাগের শিক্ষক মনিরুল হক। আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তৃতা করেন কলেজ পরিচালনা কমিটির সদস্য জাহিদুল ইসলাম, শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন, এটিএম হারুনুর রশিদ, গোলাম রব্বানী, আশরাফুল আলম,নবাববাড়ি শাহী মসজিদের ইমাম মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন।
ধনবাড়ীর জমিদার ও অবিভক্ত বাংলার প্রথম মুসলমান মন্ত্রী নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সম্পর্কে আলোকপাত করেন তারা। তারা বলেন, গত ৯৫ বছরে ধনবাড়ীতে প্রয়াত নবাবজাদা কে নিয়ে স্মরণসভা হয়নি। তাঁর ও তাঁর পরিবারের প্রতিষ্ঠত শিক্ষা প্রতিণ্ঠান সংশ্লিষ্টরা মিলে এবার এমন আয়োজন করেছে।
নবাব পরিবারের সদস্য সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরীর দৌহিত্র( নাতনির সন্তান) আফিফ উদ্দিন আহমাদ জানান, ধনবাড়ীতে এমন আয়োজন না হলেও ঢাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান,সমিতি বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করেছে। তিনি জানান, গত১৬/১৭ বছরে ধনবাড়ীতে কোন কর্মসূচি করার সুযোগ ছিল না। অনেকদিন পরে হলেও শুরু যেহেতু হলো সামনের দিন গুলোতে নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর নানা দিক নিয়ে কর্মসূচি করা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সম্পর্কে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সনট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষ্যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে পৃথক দুটি মানপত্রে ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলী চৌধুরী ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রথম দাবি তুলেন। ৫ মাস পর ১৯১২ সালের ৩১ জানুয়ারি লর্ড হার্ডিঞ্জের ঢাকায় অবস্থানকালে তাঁর সাথে নওয়াব সলিমুল্লাহ ও নওয়াব আলীসহ ১৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে বঙ্গভঙ্গ রদে মুসলমানদের যে সমূহ ক্ষতি হচ্ছে, তার চিত্র তুলে ধরেন। এ বিষয়ে ১৩ সদস্যবিশিষ্ট নাথান কমিটি গঠিত হয়। নওয়াব আলী চৌধুরী নাথান কমিটিে অন্যতম সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে আর্থিক সংকটের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার অগ্রগতি অনেকটা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবির বাস্তবায়নে ভিতরে ভিতরে কাজ হতে থাকে। ১৯১৭ সালের ৭ মার্চ ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সভায় ইম্পেরিয়াল কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে নওয়াব আলী চৌধুরী বিষয়টিকে আবার উপস্থাপন করেন। ১৯২০ সালের ১৮ মার্চ ভারতীয় আইনসভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল অ্যাক্টে পরিণত হয় এবং ২৩ মার্চ তা গভর্নর জেনারেলের অনুমোদন লাভ করে। লর্ড হার্ডিঞ্জ কর্তৃক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নয় মাস পর ১৯২১ সালের জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যথারীতি ক্লাস শুরু হয়। ১৯২২ সালে নওয়াব আলী চৌধুরী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি বাবদ ১৬ হাজার টাকার একটি তহবিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদান করেন। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালে অর্থাভাব দেখা দিলে তিনি নিজ জমিদারির একাংশ বন্ধক রেখে এককালীন ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করেন।
এই নবাব সম্পর্কে অনুসন্ধান করতে গিয়ে আরো জানা গেছে, ১৯১৪ সালে রংপুরের একটি সাহিত্য সম্মেলনে এ অঞ্চলের মানুষের ভাষা বাংলা করার দাবি করেন তিনি।ফলে বাংলা ভাষাকে এ অঞ্চলের ভাষা দাবী করা প্রথম ব্যক্তি তিনি। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানের ব্যাপকতা শুধু বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নয়, প্রাথমিক শিক্ষা প্রচলনে গবেষণা প্রণিধানযোগ্য।তাঁর লেখা ‘প্রাইমারি এডুকেশন ইন রুরাল এরিয়াস’ নামের বইটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আছে সার্বিক শিক্ষা নিয়ে লেখা বইও। তাঁর গবেষণা ধর্মী লেখা ‘মৌলুদ শরীফ’, ‘ঈদুল আজহা ধর্মের প্রতি বিশেষ আকষর্ণের বহি:প্রকাশ। নারী শিক্ষা, বিস্তারে তিনি ছিলেন যত্নবান। পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নে নিরপেক্ষতার প্রশ্নে তাঁর প্রবর্তিত নিয়ম নাকি এখনো বলবৎ। প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় তার ছিল প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভূমিকা। এত সব গুণের অধিকারী নবাবকে স্মরণ, অনুসরণ ও শ্রদ্ধা জানানো উচিত বৈকি।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীর অহংকার এই নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী ১৯২৯ সালের ১৭ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।
শালবনবার্তা২৪.কম/এআর