ঢাকা ০৭:২০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৬ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রমিক থেকে রাষ্ট্রনায়ক

দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইজেমিয়ং-এর সংগ্রামী জীবনকাহিনি

রুহুল আমীন, প্রবাসী, শালবনবার্তা২৪.কম
  • আপডেট সময় : ১২:৩৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫ ১৯ বার পড়া হয়েছে

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়া এর নেতা ইজেমিয়ং এক বিস্ময়কর ও অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রার মাধ্যমে দেশের নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন। এক সময়ের কিশোর কারখানা শ্রমিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার আইনজীবী এবং অবশেষে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হওয়া এই যাত্রা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

ইজেমিয়ং ১৯৬৪ সালে উত্তর খিয়ংসাং প্রদেশের (북경상도) আন্দং (안동) নামক একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্য ছিল তাঁর জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করেই পরিবারকে সাহায্য করতে তিনি চলে আসেন সংনাম (성남), গিয়ংগি প্রদেশে (경기도)। সেখানে তিনি একটি ঘড়ি তৈরির কারখানায় মাত্র ২০০ উওন
মজুরিতে কাজ শুরু করেন। কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তাঁর বাম হাতে স্থায়ী আঘাত লাগে, যা সারা জীবন বহন করে চলেছেন।

কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তিনি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকল্প নেন। মাধ্যমিকের সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জুংআং বিশ্ববিদ্যালয় (중앙대학교)-এর আইন অনুষদে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই ১৯৮০ সালের খোঁয়াংজু অভ্যুত্থান (광주 민주화 운동) তাঁকে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে উদ্বুদ্ধ করে।

আইন পাশ করার পর তিনি সংনামে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুর্নীতিবিরোধী লড়াই, গণস্বাস্থ্য সেবা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি দ্রুতই খ্যাতি অর্জন করেন। একটি পাবলিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ছিল তাঁর অন্যতম উল্লেখ কাজ।

২০১০ সালে তিনি সংনামের (성남) মেয়র নির্বাচিত হন। সেখান থেকে তাঁর জাতীয় পরিচিতি গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইউনিফর্ম, যুবকদের জন্য বার্ষিক আর্থিক সহায়তা ও প্রসূতি সেবা চালু করে তিনি জনগণের মনোযোগ কেড়ে নেন।

২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি পার্কগুণহের (박근혜) দুর্নীতির প্রতিবাদে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি মজবুত করেন।

২০১৮ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল গিয়ংগি প্রদেশের (경기도) গভর্নর নির্বাচিত হন। তিনি দেশের প্রথম ইউনিভার্সাল কোভিড-১৯ ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং অবৈধ নির্মাণ ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

২০১৭ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি তখন নির্বাচিত হননি। ২০২২ সালের নির্বাচনে মাত্র এক শতাংশের কম ব্যবধানে পরাজিত হন ইউনসকইয়ল (윤석열)-এর কাছে। কিন্তু হাল না ছেড়ে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে ফিরে আসেন এবং পরে ডিপিকে নেতৃত্ব দেন।

২০২৫ সালের ইউনসকইয়লের (윤석열) অভিশংসনের ফলে অনুষ্ঠিত হয়, তিনি বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কও কম ছিল না। কিছু রিয়েল এস্টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত হয়েছে। ২০২৪ সালে বুসান (부산)-এ এক ছুরি হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সাধারণ ও তরুণ জনগণের সমর্থন তাঁর প্রতি অটুট থেকেছে।

ইজেমিয়ং (이재명) আজকের দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিচ্ছবি এক সংগ্রামী, আত্মনির্ভরশীল ও সংস্কারমুখী নেতৃত্বের মুখ। তাঁর জীবনের গল্প শুধু কোরিয়ার জনগণের নয়, সারা বিশ্বের জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

শালবনবার্তা২৪.কম/এসআই

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

শ্রমিক থেকে রাষ্ট্রনায়ক

দক্ষিণ কোরিয়ার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইজেমিয়ং-এর সংগ্রামী জীবনকাহিনি

আপডেট সময় : ১২:৩৪:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ জুন ২০২৫

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে। ডেমোক্রেটিক পার্টি অব কোরিয়া এর নেতা ইজেমিয়ং এক বিস্ময়কর ও অনুপ্রেরণাদায়ক যাত্রার মাধ্যমে দেশের নেতৃত্বে আসতে যাচ্ছেন। এক সময়ের কিশোর কারখানা শ্রমিক থেকে শুরু করে মানবাধিকার আইনজীবী এবং অবশেষে প্রেসিডেন্ট পদে উন্নীত হওয়া এই যাত্রা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্যের গল্প নয়, এটি দক্ষিণ কোরিয়ার সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন।

ইজেমিয়ং ১৯৬৪ সালে উত্তর খিয়ংসাং প্রদেশের (북경상도) আন্দং (안동) নামক একটি প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দারিদ্র্য ছিল তাঁর জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করেই পরিবারকে সাহায্য করতে তিনি চলে আসেন সংনাম (성남), গিয়ংগি প্রদেশে (경기도)। সেখানে তিনি একটি ঘড়ি তৈরির কারখানায় মাত্র ২০০ উওন
মজুরিতে কাজ শুরু করেন। কাজ করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় তাঁর বাম হাতে স্থায়ী আঘাত লাগে, যা সারা জীবন বহন করে চলেছেন।

কঠিন বাস্তবতার মাঝেও তিনি নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের সংকল্প নেন। মাধ্যমিকের সমমান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে জুংআং বিশ্ববিদ্যালয় (중앙대학교)-এর আইন অনুষদে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই ১৯৮০ সালের খোঁয়াংজু অভ্যুত্থান (광주 민주화 운동) তাঁকে মানবাধিকার ও সামাজিক ন্যায়বিচারের পথে উদ্বুদ্ধ করে।

আইন পাশ করার পর তিনি সংনামে মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। দুর্নীতিবিরোধী লড়াই, গণস্বাস্থ্য সেবা এবং জনকল্যাণমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে তিনি দ্রুতই খ্যাতি অর্জন করেন। একটি পাবলিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ছিল তাঁর অন্যতম উল্লেখ কাজ।

২০১০ সালে তিনি সংনামের (성남) মেয়র নির্বাচিত হন। সেখান থেকে তাঁর জাতীয় পরিচিতি গড়ে ওঠে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে ইউনিফর্ম, যুবকদের জন্য বার্ষিক আর্থিক সহায়তা ও প্রসূতি সেবা চালু করে তিনি জনগণের মনোযোগ কেড়ে নেন।

২০১৬ সালে রাষ্ট্রপতি পার্কগুণহের (박근혜) দুর্নীতির প্রতিবাদে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে তিনি তাঁর সংস্কারপন্থী ভাবমূর্তি মজবুত করেন।

২০১৮ সালে তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল গিয়ংগি প্রদেশের (경기도) গভর্নর নির্বাচিত হন। তিনি দেশের প্রথম ইউনিভার্সাল কোভিড-১৯ ত্রাণ বিতরণ প্রক্রিয়া শুরু করেন এবং অবৈধ নির্মাণ ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থার ওপর কঠোর নীতি গ্রহণ করেন।

২০১৭ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নিলেও তিনি তখন নির্বাচিত হননি। ২০২২ সালের নির্বাচনে মাত্র এক শতাংশের কম ব্যবধানে পরাজিত হন ইউনসকইয়ল (윤석열)-এর কাছে। কিন্তু হাল না ছেড়ে তিনি সংসদ সদস্য হিসেবে ফিরে আসেন এবং পরে ডিপিকে নেতৃত্ব দেন।

২০২৫ সালের ইউনসকইয়লের (윤석열) অভিশংসনের ফলে অনুষ্ঠিত হয়, তিনি বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে থেকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে বিতর্কও কম ছিল না। কিছু রিয়েল এস্টেট কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্ত হয়েছে। ২০২৪ সালে বুসান (부산)-এ এক ছুরি হামলায় তিনি প্রাণে বেঁচে যান। তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যেও সাধারণ ও তরুণ জনগণের সমর্থন তাঁর প্রতি অটুট থেকেছে।

ইজেমিয়ং (이재명) আজকের দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিচ্ছবি এক সংগ্রামী, আত্মনির্ভরশীল ও সংস্কারমুখী নেতৃত্বের মুখ। তাঁর জীবনের গল্প শুধু কোরিয়ার জনগণের নয়, সারা বিশ্বের জন্যই অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।

শালবনবার্তা২৪.কম/এসআই