মধুপুর শালবনের জন্য দায় ও দরদ
মধুপুর শালবনের জন্য দায় ও দরদ
- আপডেট সময় : ০২:০৮:২৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২৯ বার পড়া হয়েছে
বর্তমানে কেবল টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় বিস্তৃত ক্ষয়িষ্ণু মধুপুর শালবন পৃথিবীর এক প্রাচীন পত্রঝরা অরণ্য। ‘গড়’ হিসেবে পরিচিত এই বনের আদিবাসিন্দা মান্দি (গারো) ও কোচ-বর্মণ জাতি। মান্দি ভাষায় এই বন ‘বলসাল ব্রিং’ এবং মধুপুর গড় ‘হা.বিমা’ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলে ফ্রান্ক বি সিমসন শালবন থেকে উপকূল দেশের নানাপ্রান্তে বন্যপ্রাণী শিকার করে বেরিয়েছেন। তার সেসব নির্মম শিকার কাহিনি লন্ডন থেকে ‘দ্য লেটার্স অন স্পোর্টস ইন ইস্টার্ন বেঙ্গল’ নামে বিশাল এক বই প্রকাশিত হয়। ওই বইতে বন্যপ্রাণী ভরপুর শালবনের বহু স্মৃতি আছে। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার বিখ্যাত জমিদার শ্রী সূর্যকান্ত আচার্য বাহাদুর মধুপুর শালবনে তার বহু শিকার কাহিনি লিপিবব্ধ করে গেছেন এবং সেসব শিকার কাহিনি ১৩১৩ বাংলায় লেখা। সেসব কাহিনিতে মধুপুর শালবনের যে চিত্র পাওয়া যায় তা এক দুর্ভেদ্য জঙ্গল বোঝায়। মধুপুর গড় কেবল এক পত্রঝরা শালবন নয়। এর বাস্তুতন্ত্র ধানের পাশাপাশি পাট, আনারস, কলা, কাঁঠাল, কচু, আখসহ নানান শস্য ফসল প্রতি বছর বাংলাদেশকে জোগান দেয়। এ গড়ের মধুপুরের আনারস, চামারা ধান, কালিয়াকৈরের ধনীর চিড়া, টাঙ্গাইল শাড়ি, তুলসীমালা ধান, মুক্তাগাছার মন্ডা, জামালপুরের নকশিকাজ, বাবুরহাটের তাঁত বাংলাদেশের অনন্য ভৌগোলিক নির্দেশনা। মধুপুর শালবনের বৈচিত্র্য ও বৈভব আজ বিদীর্ণ এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অধিকার লুণ্ঠিত। মধুপুর শালবনের এ করুণ পরিণতির জন্য দায়ী রাষ্ট্র ও নয়াউদারীকরণ ব্যবস্থার বৈষম্যমূলক নীতি, দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নয়ন কর্মকা-। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের বহুমুখী দাবি উঠেছে। স্মরণ রাখা জরুরি, এই মধুপুর শালবনেই দেশের প্রথম সংবিধান রচিত হয়েছিল, কিন্তু নিদারুণভাবে শালবনের অধিকারকে আড়াল করা হয়েছে। মধুপুর শালবনের ভূমিপ্রশ্ন, আদিবাসী অধিকার, বাণিজ্যিক বাগান, আগ্রাসী গাছের বাগান, ইকোপার্কসহ বহু প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। আমরা আশা করব, রাষ্ট্র মধুপুর শালবনের ক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। মহামান্য হাইকোর্ট ২০১৯ সালে মধুপুর শালবনের ক্ষেত্রে যেসব রায় দিয়েছে সেসব বিবেচনায় নিয়ে সর্বস্তরের সর্ববর্গের জনতার প্রস্তাব ও অংশগ্রহণরে ভেতর দিয়ে এক জনমুখী ও শালবনবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণে তৎপর হবে।
জোর করে জুম আবাদ নিষিদ্ধ ১৯৫০ : মধুপুর শালবন বা মান্দি কুসুকে বলসালব্রিং এহাবাহুআ (জুম আবাদ) করেই মধুপুরে মান্দিরা গড়ে তুলেছিলেন তাদের প্রাচীন বসত। রাজা শ্রী যোগীন্দ্রনাথ রায় বাহাদুরের সঙ্গে ১৮৬০ থেকেই মান্দি গ্রামপ্রধানদের জমি বিষয়ক চুক্তি হয় এবং বনের অধিবাসীরা রাজার ‘রায়ত’ হিসেবে চার্জশিটের রাজাকে খাজনা প্রদান শুরু করে। ১৯৫০ সালে প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে হা.বিমার এক বিশাল অংশ হয়ে যায় ‘রাষ্ট্রীয় বনভূমি’। কয়েকশ বছর ধরে বসবাসরত মান্দি-কোচরা হারায় ভূমির প্রথাগত মালিকানা। চালাজমিতে জুমআবাদ নিষিদ্ধ হলে বাধ্য হয়ে মান্দিরাও নামা বা বাইদ জমিতে বাঙালিদের মতো লাঙলভিত্তিক কৃষিকাজ শুরু করে। বসতবাড়ির চারধারের অল্পবিস্তর চালাজমিনে শুরু হয় আনারস-পেঁপে-থাবুলচু-আদা-হলুদ-মান্দি কচু-কাঁঠালের মিশ্রবাগান। কিন্তু পরবর্তী মধুপুর হয়ে ওঠে রাসায়নিকনির্ভর বাণিজ্যিক আনারস ও কলাবাগান। তৈরি হয় ভূমি সংকটের নতুন ধরন।
ফরেস্ট গেজেট ১৯৫৬ : ১৯২৭ সালের ঔপনিবেশিক বন আইনের ৬ ধারার মাধ্যমে তৎকালীন ‘পূর্ববঙ্গীয় বন বিভাগ’ ১৯৫৬ সালে একটি ‘ফরেস্ট গেজেট’ প্রকাশ করে। ওই সালে ফরেস্টার আফাজউদ্দিন ভুইয়ার নেতৃত্বে দোখলা রেঞ্জের চুনিয়ায় প্রাকৃতিক বন কেটে গাছের চারা লাগায় বন বিভাগ। প্রাচীন এক বনের নাম পাল্টে হয়ে যায় ‘উডলট বাগান’। গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বন বিভাগ চালা ও বাইদ এলাকায় স্থানীয় অধিবাসীদের প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণ করে।
জাতীয় উদ্যান ঘোষণা ১৯৬২ : ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান ও মোনায়েম খানের আমলে মান্দিদের উচ্ছেদের জন্য ‘জাতীয় উদ্যান’ নাম দিয়ে ২০,৮২৭.৩৭ একর শালবনে তারের বেড়া দেওয়া হয়। তারের বেড়ার ভেতর আটকে পড়ে এক প্রাচীন পত্রঝরা বন। কেবল বনবাসী আদিবাসী মানুষ নয়; বিশেষ করে বনের সরীসৃপ, পাখি এবং উভয়চরদের এ ধরনের কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণে নিজেদের প্রাকৃতিক বিচরণস্থল ও বাস্তুতন্ত্র হারাতে থাকে।
ফায়ারিং ও বোম্বিং রেঞ্জ ১৯৭৭-৭৮ : ১৯৭৭-৭৮ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য বন বিভাগ দখলকৃত ‘সংরক্ষিত বন এলাকায়’ করা হয় বম্বিং রেঞ্জ। রাজাবাড়ির মতো প্রাচীন গ্রাম উচ্ছেদ করে প্রাকৃতিক শালবনে তৈরি হওয়া বিমানবাহিনীর ফায়ারিং ও বোম্বিং রেঞ্জ শালবনের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে বহু নিদারুণ অভিঘাত তৈরি করেছে।
আটিয়া অধ্যাদেশ ১৯৮২ : ১৯৮২ সালে ‘আটিয়া অধ্যাদেশের’ মাধ্যমে টাঙ্গাইল জেলার ৫৫,৪৭৬.৩৮ একর ভূমি ‘আটিয়া সংরক্ষিত বন’ হিসেবে ঘোষিত হয়। জমিদারি আমল থেকেই স্থানীয় আদিবাসীরা ভূমির খাজনা নিয়মিত পরিশোধ করে আসছিলেন। আটিয়া অধ্যাদেশের মাধ্যমে মধুপুর শালবনের প্রাচীন গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের ভূমি খাজনা বাতিল করা হয়। কার্যত নিজেদের আদি কৃষিজমি ও জন্মমাটি হয়ে পড়ে রাষ্ট্রীয় জমিন এবং আদিবাসীরা হয়ে যায় ভূমিহীন।
উচ্ছেদ নোটিস ১৯৮৪ : ১৯৮৪ সালে মধুপুর বনে বসবাসরত মান্দি-কোচদের বন বিভাগ আবার উচ্ছেদ নোটিস দেয়। প্রাচীন গ্রামগুলো থেকে আদিবাসীদের তুলে নিয়ে নতুন গুচ্ছগ্রাম গড়ে তোলারও পরিকল্পনা হয়। কিন্তু আদিবাসীদের প্রতিবাদ এবং আন্দোলনের ফলে এই পরিকল্পনা স্থগিত হয়।
আগ্রাসী গাছের আগ্রাসন ১৯৮৯-১৯৯৫ : ১৯৮৯-১৯৯৫ সাল পর্যন্ত এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণের টাকায় ৭৫০০ একর উডলট ও এগ্রোফরেস্ট্রি বাগান করার ফলে অনেক মান্দি আপন জায়গা জমিন হারায়। এডিবির সহায়তায় মূলত মধুপুর শালবনে প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র বিনষ্ট করে এবং শালগাছ উপড়ে আগ্রাসী একাশিয়া, ম্যাঞ্জিয়াম বাগান গড়ে তোলা হয় এবং গড়ে তোলা হয় রাবার বাগান। এমন বাস্তুতন্ত্রবিরোধী কর্মসূচিগুলো পরিবেশ বিপর্যয়কারী হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় এডিবি ২০০৫ সাল থেকে কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়।
ভূমির জন্য নিহত গীদিতা রেমা ২০০১ : ২০০১-এর ২০ মার্চ বাঙালি ভূমিদখলদাররা সশস্ত্র হামলা করে গীদিতাদের বাড়ি। ছোট বোন ইতালিন রেমাকে জোর করে অপহরণ করতে চাইলে, গীদিতা বাধা দেয়। ধারালো অস্ত্র নিয়ে মফিজ গং গীদিতার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। খুন হয় গীদিতা। এর আগে ভূমি দখলদারদের হাত খুন হন বিহেন নকরেক।
মধুপুর ইকোপার্ক ২০০৩ : ২০০০ সাল থেকেই শালবনের ৩০০০ একর কোর এলাকাকে ৬১,০০০ রানিং ফুট দেয়াল দিয়ে ঘিরে বিতর্কিত ‘ইকোট্যুরিজম প্রকল্প’ শুরু হয়। ২০০৪ সালের ৩ জানুয়ারি ইকোপার্কবিরোধী মিছিলে বনরক্ষী ও পুলিশের গুলিতে নিহত হয় পীরেন স্নাল। গুরুতর আহত হয়ে সারাজীবনের জন্য হুইলচেয়ার সঙ্গী হয়ে যায় স্কুলপড়ুয়া কিশোর উৎপল নকরেক।
বন বিভাগের গুলিতে ঝাঁজরা শিশিলিয়া স্নাল ২০০৬ : ২১ আগস্ট ২০০৬ তারিখে বন বিভাগের গুলিতে আবারও রক্তাক্ত হয় মধুপুর শালবন। বন বিভাগ গুলি করে দরিদ্র মান্দি নারীদের বুকে। ঘটনার দিন সাতারিয়া গ্রামের ফজলী দফো, ফলিদুত, শিশিলিয়া স্নালসহ ৮-১০ জন আদিবাসী মান্দি নারী মধুপুর জাতীয় উদ্যানের রসুলপুর সদর রেঞ্জের সাতারিয়া এলাকায় জ্বালানির জন্য ঝরা শালপাতা কুড়াচ্ছিলেন।
কলাবাগান ধ্বংস ২০০৭ : ২০০৭ সালে দখলকৃত বনভূমি ‘উদ্ধারের’ নামে একের পর এক কলাবাগান কেটে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। বন বিভাগ মোড়ে মোড়ে সাইনবোর্ড টানায় ‘কলাচাষ পরিবেশ ধ্বংস করে’।
চলেশ রিছিলের মৃত্যু ২০০৭ : তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে (২০০৭) সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন কার্যক্রমের ক্ষেত্রে নানান বিধি নিষেধ আরোপিত হওয়ায় ইকোপার্কবিরোধী আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক ধরনের শিথিলতা তৈরি হয়। কিন্তু এর ভেতরেই মধুপুরের মাগন্তিনগর-বেরীবাইদ গ্রামের আদিবাসী নেতা ট্রাকচালক ইউনিয়ন টেলকী শাখার সভাপতি চলেশ রিছিলকে ১৮ মার্চ ২০০৭ তারিখে যৌথবাহিনী গ্রেপ্তার করে এবং বাহিনীর হেফাজতে বিচারবহির্ভূত অবস্থায় তার প্রশ্নহীন করুণ মৃত্যু হয়।
বাসন্তী রেমার কলাবাগান ধ্বংস ২০২০ : ২০২০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পেগামারি গ্রামের বাসন্তী রেমা ও গেটিস যেত্রা পরিবারের ৫০ শতক জমির পাঁচ শতাধিক শবরী কলাগাছ কেটে ফেলে বন বিভাগ। টাঙ্গাইল বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক জামাল হোসেন তালুকদারের নেতৃত্বে ‘বনভূমি’ উদ্ধারের নামে এই বিনাশ চলে। কলাবাগান কেটে বন বিভাগের লোকজন সেখানে আগ্রাসী একাশিয়া চারা লাগাতে চেয়েছিল। জানা যায়, এই জমির পাশে বন বিভাগের ২০০৭-২০০৮ সালের আগর চাষ প্রকল্প ছিল। আগর চাষ ব্যর্থ হয়, পরে বন বিভাগ কাজুবাদাম বাগান করে।
আবারও উচ্ছেদ নোটিস ২০২১ : ২০১৬ সালে আবারও অরণখোলা মৌজার ৯১৪৫.০৭ একর ভূমিকে আবারও সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়। আর শুধু এই মৌজাতেই আছে কয়েকশ বছরের প্রাচীন ১৩টি মান্দি গ্রাম। ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারির ভেতর সবাইকে উচ্ছেদ নোটিস পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি বন বিভাগের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু সমাধান চেয়ে ‘মধুপুরগড়ের সংক্ষুব্ধ জনগণ’ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন।
কৃষিজমি বিনষ্ট করে কৃত্রিম লেক ২০২২ : বন বিভাগ দোখোলার কৃষিজমি খনন করে কৃত্রিম লেক তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ নিয়ে আন্দোলন শুরু হয়। ২৩ নভেম্বর ২০২১ তারিখে কারা যেন এই সাইনবোর্ড নামিয়ে ফেলে। বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ‘টেকসই বন ও জীবিকা (সুফল)’ প্রকল্পও বহু বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। কৃষিজমি বিনষ্ট করে কৃত্রিম লেক খনন কার্যক্রমটি মূলত রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে পরিচালিত ‘স্থানীয় ও নৃগোষ্ঠী জনগণের সহায়তায় মধুপুর ইকো-ট্যুরিজম উন্নয়ন ও টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশ।
দায় ও দরদের জায়গা থেকে মধুপুর শালবনকে পাঠ করা জরুরি অরণ্য বাস্তুতন্ত্র গড়ে ওঠে, বিকশিত হয় এবং এর নানা ধাপে রূপ ও রূপান্তর প্রাকৃতিকভাবে ভিন্ন ভিন্ন হয়। একেকটা অরণ্য বিরান পর্যায় থেকে ক্লাইমেক্স বা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। কিন্তু মধুপুর বনের প্রাকৃতিকভাবে বিকশিত হওয়ার অধিকার বারবার ক্ষুন্ন করা হয়েছে। নয়াউদারবাদী মনস্তত্ত্ব এই বনের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বিবরণ কখনোই বোঝার চেষ্টা করেনি। বরং বারবার নানা প্রকল্প, শর্ত আর সিদ্ধান্ত চাপানোর চেষ্টা করেছে। এর ফলাফল প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক সব দিক থেকেই বিপজ্জনক হয়েছে। কমেছে বন্যপ্রাণের উপস্থিতি, বিস্ময়কর প্রাণবৈচিত্র্য হয়েছে নিশ্চিহ্ন। পাশাপাশি বননির্ভর জনগোষ্ঠীর সঙ্গে বন বিভাগ ও রাষ্ট্রের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব বেড়েছে এবং দ্বন্দ্বমূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। মধুপুর শালবনে বহু আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নামে একাধিক মিথ্যা বন মামলা আছে। এসব মিথ্যা বন মামলা বাতিল হওয়া জরুরি। মধুপুর শালবনে প্রাকৃতিক বন কেটে আগ্রাসী গাছের বাগান করে নাম দেওয়া হয়েছে সামাজিক বনায়ন। পরিবেশ ও জীবনবিনাশী এমন বৈষম্যমূলক কর্মসূচি বাতিল জরুরি। প্রাকৃতিক বনে একাশিয়া ও ইউক্যালিপটাসের মতো আগ্রাসী গাছ নিষিদ্ধ করতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার তৎপর হয়েছে। আশা করি গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে গঠিত এই সরকার দায় ও দরদের জায়গা থেকে মধুপুর শালবনকে পাঠ করবে এবং ন্যায়বিচার সুরক্ষায় তৎপর হবে। মধুপুর শালবনের ওপর সব শোষণমূলক চিন্তা কিংবা শর্তমূলক নানা শাসনকাঠামো দূরে সরিয়ে রেখে এই বনকে পাঠ করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। জলবায়ু-বিপন্ন এই দুনিয়ায় আমাদের জন্য জরুরি হবে এই প্রাচীন বনটিকে বোঝা এবং বৈজ্ঞানিকভাবে এর জটিল প্রতিবেশগত সম্পর্ককে বিবেচনা করা।
লেখক: গবেষক ও লেখক
পাভেল পার্থ
সূত্রঃ দেশ রূপান্তর