ঢাকা ০২:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

হলুদ সরিষা ক্ষেত আর উত্তুরে হাওয়া: পৌষ যখন রঙ ছড়ায়

খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
  • আপডেট সময় : ১০:৫০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে

অগ্রহায়ণ মাস শেষে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে শীতের রোমাঞ্চ। ফসলের মাঠ থেকে ধান উত্তোলন প্রায় শেষের দিকে। মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। সেই সাথে গাছের ঝড়া পাতা ও দূর্বাঘাসে লেগে থাকা ভোরের শিশির বিন্দু শীতের আগমনী জানান দিচ্ছে।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পৌষের শুরু হয়েছে। পৌষের হাড়কাঁপানো শীত যেন প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। গ্রাম কিংবা শহরের রাস্তায় বেরোলেই শীতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কর্মব্যস্ত মানুষজন গায়ে মোটা কাপড় ও মাথা মুড়ানোর জন্য টুপি কিংবা গায়ে চাদর জড়িয়ে ছুটছেন গন্তব্যের দিকে। গ্রামের দৃশ্য বেশ রোমাঞ্চকর ধান গাছের নাড়া কিংবা খড় জ্বালিয়ে আগুনে হাত পা সেকার দৃশ্য চোখে পড়ে। আগুনে হাত পা সেকতে সেকতে গ্রামের ছেলেরা আগুনে ধান পুড়ে খই তৈরী করে যা বেশ রোমাঞ্চকর।

পৌষের সময়টাতে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা পুলির দুম পড়ে যায়। গ্রামের প্রতিটি ঘরে বাহারি স্বাদ আর ঢংয়ের পিঠা তৈরীর আয়োজন চলে৷ ভাপা পিঠা, মিঠা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা প্রভৃতি পিঠার ঘ্রাণে গ্রামীণ জনপদ মুখরিত থাকে। সাম্প্রতিক শীতের সকাল ও সন্ধ্যায় ভাসমান পিঠার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। শহরের অলিগলি, গ্রামের মোড় ও বাজারগুলোতে ভাসমান পিঠার দোকানে দোকানিরা বাহারি স্বাদের পিঠার পসরা সাজিয়ে রাখে। ফলে সকাল ও সন্ধ্যার আড্ডায় পিঠা আলাদা আকর্ষণ। পিঠার পাশাপাশি পৌষের শুরুতে খেজুর রসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। শহর ও গ্রামের পথে পথে গাছিরা খেজুরের রস নিয়ে হাজির হয়। যা শীতের আকর্ষণ বহুগুণ বৃদ্ধি করে।

এ সময় যেন প্রকৃতিও নবরূপে অভিভূত হয়। মাঠের ফসল কাটা শেষ হতে না হতেই সরিষার ফুলে ফসলের মাঠগুলো শোভিত হয়। পাশাপাশি নদীর পানির শান্ত ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। শীতের রোদ যেন হয় তেজোহীন মিষ্টি। শহরের ছাদে ও গ্রামে রোদ পৌহানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ সময় টিউবওয়েলের পানির বৈশিষ্ট্যও শীতে আলাদা আকর্ষণ। রাত্রে কম্বল বা কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুম শীতের সময়ের চিরচেনা অনুষঙ্গ।

পৌষমাস বাংলা ক্যালেন্ডার ও বাঙালির জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিশোরদের টুলাপানি ও গ্রামীণ পিঠা উৎসব পৌষের কদর বৃদ্ধি করে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!

হলুদ সরিষা ক্ষেত আর উত্তুরে হাওয়া: পৌষ যখন রঙ ছড়ায়

আপডেট সময় : ১০:৫০:০০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

অগ্রহায়ণ মাস শেষে প্রকৃতিতে বিরাজ করছে শীতের রোমাঞ্চ। ফসলের মাঠ থেকে ধান উত্তোলন প্রায় শেষের দিকে। মাঠে মাঠে হলুদের সমারোহ। সেই সাথে গাছের ঝড়া পাতা ও দূর্বাঘাসে লেগে থাকা ভোরের শিশির বিন্দু শীতের আগমনী জানান দিচ্ছে।

বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পৌষের শুরু হয়েছে। পৌষের হাড়কাঁপানো শীত যেন প্রকৃতিতে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। গ্রাম কিংবা শহরের রাস্তায় বেরোলেই শীতের উপস্থিতি টের পাওয়া যায়। কর্মব্যস্ত মানুষজন গায়ে মোটা কাপড় ও মাথা মুড়ানোর জন্য টুপি কিংবা গায়ে চাদর জড়িয়ে ছুটছেন গন্তব্যের দিকে। গ্রামের দৃশ্য বেশ রোমাঞ্চকর ধান গাছের নাড়া কিংবা খড় জ্বালিয়ে আগুনে হাত পা সেকার দৃশ্য চোখে পড়ে। আগুনে হাত পা সেকতে সেকতে গ্রামের ছেলেরা আগুনে ধান পুড়ে খই তৈরী করে যা বেশ রোমাঞ্চকর।

পৌষের সময়টাতে বাংলার ঘরে ঘরে পিঠা পুলির দুম পড়ে যায়। গ্রামের প্রতিটি ঘরে বাহারি স্বাদ আর ঢংয়ের পিঠা তৈরীর আয়োজন চলে৷ ভাপা পিঠা, মিঠা পিঠা, চিতই পিঠা, পুলি পিঠা প্রভৃতি পিঠার ঘ্রাণে গ্রামীণ জনপদ মুখরিত থাকে। সাম্প্রতিক শীতের সকাল ও সন্ধ্যায় ভাসমান পিঠার দোকান দেখতে পাওয়া যায়। শহরের অলিগলি, গ্রামের মোড় ও বাজারগুলোতে ভাসমান পিঠার দোকানে দোকানিরা বাহারি স্বাদের পিঠার পসরা সাজিয়ে রাখে। ফলে সকাল ও সন্ধ্যার আড্ডায় পিঠা আলাদা আকর্ষণ। পিঠার পাশাপাশি পৌষের শুরুতে খেজুর রসে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে। শহর ও গ্রামের পথে পথে গাছিরা খেজুরের রস নিয়ে হাজির হয়। যা শীতের আকর্ষণ বহুগুণ বৃদ্ধি করে।

এ সময় যেন প্রকৃতিও নবরূপে অভিভূত হয়। মাঠের ফসল কাটা শেষ হতে না হতেই সরিষার ফুলে ফসলের মাঠগুলো শোভিত হয়। পাশাপাশি নদীর পানির শান্ত ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি পায়। শীতের রোদ যেন হয় তেজোহীন মিষ্টি। শহরের ছাদে ও গ্রামে রোদ পৌহানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য পরিলক্ষিত হয়। এ সময় টিউবওয়েলের পানির বৈশিষ্ট্যও শীতে আলাদা আকর্ষণ। রাত্রে কম্বল বা কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুম শীতের সময়ের চিরচেনা অনুষঙ্গ।

পৌষমাস বাংলা ক্যালেন্ডার ও বাঙালির জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিশোরদের টুলাপানি ও গ্রামীণ পিঠা উৎসব পৌষের কদর বৃদ্ধি করে।