৪২ বছর পর
ডাকসু নির্বাচনে আবারো মধুপুরের শিক্ষার্থী নির্বাচিত

- আপডেট সময় : ০৪:১১:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ৫৩৬ বার পড়া হয়েছে

১৯৮২ সালের ডাকসু নির্বাচনের পর চার দশকের বেশি সময় পার হয়েছে। সে নির্বাচনে কেন্দ্রীয় সংসদে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে ছিলেন মধুপুরের এক বিশিষ্ট শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার ৩৮ তম ডাকসু নির্বাচনে আবারো মধুপুরের চমক। এবার হল সংসদের সদস্য পদে নির্বাচিত হয়ে চমক তৈরি করলেন মধুপুরের দুই কৃতি শিক্ষার্থী। তারা হলেন- মহিষমারা কলেজের সাবেক ছাত্র ও ঢাবি’র সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র আমিনুল ইসলাম ও ফার্মসি বিভাগের ছাত্র জাহিদুল ইসলাম । মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের কৃষক মো. জয়নাল আবেদীন ও সাজিদা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আমিনুল আর লাউফুলা গ্রামের কৃষক রইছ উদ্দিন ও জাহানারা বেগম দম্পতির সন্তান মো. জাহিদুল ইসলাম।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সদস্য পদের ১৯ প্রার্থীর বিপরীতে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন আমিনুল।তিনি তার আবাসিক হলে বুর্জোয়া সোসিওলজিকাল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন সভাপতি। আমিনুল জানান, রাজনৈতিক প্লাট ফরম ব্যতিরেকেই স্বতন্ত্র থেকে হল সংসদে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে সর্বোচ্চ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তার হলে ৬৬৪ ভোটের মধ্যে ৮৩% ভোট কাস্ট হয়েছে। অর্থাৎ ৫৫২ ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন। এতে নির্বাচিত চার সদস্যের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৭৩ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। হল সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন তার চেয়ে বেশি ভোটে। তিনি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তার নিকটতম সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ১৩৫ ভোট পেয়ে।
অন্যদিকে মো. জাহিদুল ইসলাম ফজলুল হক মুসলিম হল সংসদ নির্বাচনে সাহিত্য সম্পাদক (ছাত্রদল মনোনীত প্যানলের) পদে ৩৪২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
এর আগে ১৯৮০ সালের ডাকসু নির্বাচনে শামসুন্নাহার ছাত্রী হল সংসদে জিএস নির্বাচিত হন অখন্ড মধুপুরের (ধনবাড়ীর মুশুদ্দি গ্রামের) কৃতি শিক্ষার্থী শামসুননাহার চাপা। দ্বাদশ সংসদে চাপা সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি ও পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ছিলেন।
এরপর ১৯৮২ সালের ২৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত ডাকসু নির্বাচনে মধুপুরের কৃতি সন্তান অর্থনীতি বিভাগের তৎকালীন শিক্ষার্থী খন্দকার আনোয়ারুল হক ডাকসু কেন্দ্রীয় সদস্য পদে নির্বাচিত হন। ডাকসুর কেন্দ্রীয় সংসদের ইতিহাসে উত্তর টাঙ্গাইলের( মধুপুর) সন্তান হিসেবে তিনিই একমাত্র নির্বাচিত সদস্য। পরে তিনি টাঙ্গাইল -১ আসনে এমপি নির্বাচিত হন। ৮২’র ওই ডাকসু নির্বাচনে বাসদ – ছাত্রলীগের আধিপত্য ছিল একচেটিয়া। ওই সংসদে ভিপি পদে আক্তরুজ্জামান ও জিএস পদে জিয়াউদ্দিন বাবলু নির্বাচিত হয়েছিলেন। সব দলের প্রতিনিধিত্ব ছিল ওই ডাকসুতে। ৪৩ বছরের মাথায় এসে ৩৮ তম ডাকসু নির্বাচনে আবারো মধুপুরের প্রতিনিধিত্ব সৃষ্টি করলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আমিনুল ইসলাম ও ফার্মেসির জাহিদুল ইসলাম। এর আগে আশির দশকের শুরুতে মহসিন হলের জাসদ ছাত্রলীগের সভাপতি হয়ে সাংগঠনিক দায়িত্বে ছিলেন মধুপুরের আরেক কৃতি শিক্ষার্থী মধুপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট রাজনীতিক খন্দকার আব্দুল গফুর মন্টু।
২০১৭ সালের এসএসসি ও ২০১৯ সালে মধুপুরের মহিষমারা কলেজ থেকে প্রথম জিপিএ-৫ অর্জনকারী মধুপুর-ধানবাড়ী উপজেলার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত হয়েছিলেন এবারের নির্বাচিত সদস্য আমিনুল। ডাকসু হল সংসদ নির্বাচনে আমিনুলের বিজয় মধুপুরের সুধীজনে বেশ সাড়া ফেলেছে। বিশেষ করে ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধুপুর ভিত্তিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের আহবায়ক মাহফুজুল আজম রোমেলসহ সদস্যগণ সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য ও ডাকসুর ৮২ সংসদের নির্বাচিত সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হক, ঢাবির সাবেক ছাত্র সাবেক অধ্যক্ষ বজলুর রশীদ খান, ঢাবিয়ান আনোয়ার হোসেন, সুইডেন প্রবাসী ঢাবিয়ান আনিছুর রহমান, স্যোসাল অ্যক্টিভিস্ট জাপান প্রবাসী হারুনুর রশীদ, মহিষমারা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা কৃষক ছানোয়ার জাহিদুল ও আমিনুলের বিজয়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা মধুপুরের এই কৃতি শিক্ষার্থীর বিজয়কে মধুপুরের গৌরব বলে অভিহিত করেছেন। তারা এই দুই শিক্ষার্থীর সুন্দর ভবিষ্যত ও তাদের মাধ্যমে মধুপুরের গৌরব বৃদ্ধির প্রত্যাশা করেছেন।