ঢাকা ১১:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

“মধুপুর জাতীয় উদ্যানে বন রাজস্বের সম্পদ ও বনকর্মী নিখোঁজ”—রহস্যে ঘেরা

মধুপুর করেসপন্ডন্ট, শালবনবার্তা২৪.কম
  • আপডেট সময় : ১১:১৩:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫ ৬১ বার পড়া হয়েছে

টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বন রাজস্ব সংক্রান্ত সম্পদ লাল চাঁন বাদশা নামের এক বনকর্মীর নিখোঁজ ঘটনা সময়ের সাথে আরও রহস্যাবৃত হচ্ছে । নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বন বিভাগের একাধিক সূত্র ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
গত ২৬ নভেম্বর দিনগত গভীর রাতে বনকর্মী লাল চাঁন বাদশা নিখোঁজ হয়েছেন। লাল চাঁন নিখোঁজের সাথে বন রাজস্বের বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যাংক ড্রাফট,পে-অর্ডার, রশিদবইসহ মূল্যবান কাগজপত্রের সন্ধান মিলছে না। আগের দিন লাল চাঁনের নিখোঁজ ঘটনা আর পরের দিন ওইসব সম্পদের সন্ধান না মেলায় থানায় পর পর দুটি জিডি হয়েছে। জিডিতে ওইসব নিয়ে পালিয়ে গেছে এমন সন্দেহে রেঞ্জ কর্মকর্তা. মোশাররফ হোসেন থানায় ওই দুটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। প্রথম জিডির নম্বর১৪৪৯, তারিখ ২৭.১১.২৫। পরেরটি১৫২৬। তারিখ ২৮.১১.২৫।
আউটসোর্সিং কর্মী লাল চাঁন বাদশা মধুপুর বন এলাকার বগাপাড়া গ্রামের তালেব আলীর ছেলে। তিনি স্ব -পরিবারে জাতীয় উদ্যানের সদর রেঞ্জের কোয়াটারে বসবাস করেন।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের এই আউটসোর্সিং বনকর্মী লাল চাঁন নিখোঁজ হয়েছেন ৫ দিন আগে, ২৬ নভেম্বর রাত সোয়া দুইটার দিকে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রথম জিডিতে তার নিখোঁজ হওযা দাবি করেন। তিনি জানিয়েছেন, লাল চাঁন নিখোঁজ হওয়ার সময় “রাতে অফিসে কাজ করলে ২ জন থাকা দরকার। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়” এই লেখা একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন—লাল চাঁনের হাতের লেখার সাথে উদ্ধার হওয়া চিরকুটের কোনো গড়মিল রয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার রাতের অফিস এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে।
এদিকে রেঞ্জারের বক্তব্য বদলে যাচ্ছে— প্রথমে বন রাজস্বের সম্পদ( ৩১ লাখ টাকা) খোঁয়ার কথা বলেছেন। জিডিতে তিনি বলেছেন,লাল চাঁন নিখোঁজ হওয়ার পর তার অফিসের ড্রয়ারে রাখা বন রাজস্বের ব্যাংক ড্রাফট, পে অর্ডার, রশিদ বইসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় জিডি করার পর তিনি তা অস্বীকার করছেন। গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হারানো সম্পদ খোঁজে পাওয়া গেছে এবং বন রাজস্ব ব্যাংকে জমা হয়েছে। বন বিভাগের এরকম একেক সময় একেক তথ্যে স্থানীয়রা মনে করে “বন রেঞ্জে বড় ধরনের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে লাল চাঁনকে নিয়ে এমন নাটক হতে পারে।”
একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “লাল চাঁন ওইসব নিয়ে পালিয়েছে—এটা বানানো গল্প হতে পারে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
টাঙ্গাইল বন বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও চলছে বলে মন্তব্য কারো কারো।
তবে এই অভিযোগের বিষয়ে ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন গণমাধ্যম কে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন কোন বিষয় নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি নন।
মধুপুর থানার ওসি(তদন্ত) রাসেল আহমেদ এ ঘটনার আইও। তিনি জানিয়েছে—
লাল চাঁনের নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত চলছে,
তাকে উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তার সন্ধান মিললে সব রহস্য বের হয়ে আসবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!

“মধুপুর জাতীয় উদ্যানে বন রাজস্বের সম্পদ ও বনকর্মী নিখোঁজ”—রহস্যে ঘেরা

আপডেট সময় : ১১:১৩:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫

টাঙ্গাইল বন বিভাগের মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের বন রাজস্ব সংক্রান্ত সম্পদ লাল চাঁন বাদশা নামের এক বনকর্মীর নিখোঁজ ঘটনা সময়ের সাথে আরও রহস্যাবৃত হচ্ছে । নিখোঁজ ব্যক্তির পরিবার, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বন বিভাগের একাধিক সূত্র ঘটনাটিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করায় রহস্য আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
গত ২৬ নভেম্বর দিনগত গভীর রাতে বনকর্মী লাল চাঁন বাদশা নিখোঁজ হয়েছেন। লাল চাঁন নিখোঁজের সাথে বন রাজস্বের বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যাংক ড্রাফট,পে-অর্ডার, রশিদবইসহ মূল্যবান কাগজপত্রের সন্ধান মিলছে না। আগের দিন লাল চাঁনের নিখোঁজ ঘটনা আর পরের দিন ওইসব সম্পদের সন্ধান না মেলায় থানায় পর পর দুটি জিডি হয়েছে। জিডিতে ওইসব নিয়ে পালিয়ে গেছে এমন সন্দেহে রেঞ্জ কর্মকর্তা. মোশাররফ হোসেন থানায় ওই দুটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। প্রথম জিডির নম্বর১৪৪৯, তারিখ ২৭.১১.২৫। পরেরটি১৫২৬। তারিখ ২৮.১১.২৫।
আউটসোর্সিং কর্মী লাল চাঁন বাদশা মধুপুর বন এলাকার বগাপাড়া গ্রামের তালেব আলীর ছেলে। তিনি স্ব -পরিবারে জাতীয় উদ্যানের সদর রেঞ্জের কোয়াটারে বসবাস করেন।
মধুপুর জাতীয় উদ্যান রেঞ্জের এই আউটসোর্সিং বনকর্মী লাল চাঁন নিখোঁজ হয়েছেন ৫ দিন আগে, ২৬ নভেম্বর রাত সোয়া দুইটার দিকে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন প্রথম জিডিতে তার নিখোঁজ হওযা দাবি করেন। তিনি জানিয়েছেন, লাল চাঁন নিখোঁজ হওয়ার সময় “রাতে অফিসে কাজ করলে ২ জন থাকা দরকার। আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়” এই লেখা একটি চিরকুট লিখে রেখে গেছেন। কিন্তু পরিবারের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন—লাল চাঁনের হাতের লেখার সাথে উদ্ধার হওয়া চিরকুটের কোনো গড়মিল রয়েছে। নিখোঁজ হওয়ার রাতের অফিস এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে।
এদিকে রেঞ্জারের বক্তব্য বদলে যাচ্ছে— প্রথমে বন রাজস্বের সম্পদ( ৩১ লাখ টাকা) খোঁয়ার কথা বলেছেন। জিডিতে তিনি বলেছেন,লাল চাঁন নিখোঁজ হওয়ার পর তার অফিসের ড্রয়ারে রাখা বন রাজস্বের ব্যাংক ড্রাফট, পে অর্ডার, রশিদ বইসহ গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ খোঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দ্বিতীয় জিডি করার পর তিনি তা অস্বীকার করছেন। গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, হারানো সম্পদ খোঁজে পাওয়া গেছে এবং বন রাজস্ব ব্যাংকে জমা হয়েছে। বন বিভাগের এরকম একেক সময় একেক তথ্যে স্থানীয়রা মনে করে “বন রেঞ্জে বড় ধরনের অনিয়ম ধামাচাপা দিতে লাল চাঁনকে নিয়ে এমন নাটক হতে পারে।”
একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, “লাল চাঁন ওইসব নিয়ে পালিয়েছে—এটা বানানো গল্প হতে পারে। ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”
টাঙ্গাইল বন বিভাগের ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেনের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেননি এমন অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাও চলছে বলে মন্তব্য কারো কারো।
তবে এই অভিযোগের বিষয়ে ডিএফও ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন গণমাধ্যম কে জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তাধীন কোন বিষয় নিয়ে তিনি মন্তব্য করতে রাজি নন।
মধুপুর থানার ওসি(তদন্ত) রাসেল আহমেদ এ ঘটনার আইও। তিনি জানিয়েছে—
লাল চাঁনের নিখোঁজের ঘটনায় তদন্ত চলছে,
তাকে উদ্ধারে সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। তার সন্ধান মিললে সব রহস্য বের হয়ে আসবে।