জুলাই আন্দোলনে শহীদ সাজিদের শেষ বিছানাতেই শুয়ে মারা গেলেন বাবা জিয়াউল

- আপডেট সময় : ০৫:৫৬:২৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৫ ২৮ বার পড়া হয়েছে

একই মাস,একই বিছানায় শুয়ে বাবা ছেলের অন্তিম যাত্রা! শুধু কি তাই! একই চালকের সেই অ্যাম্বুলেন্সই গ্রামের বাড়িতে লাশ হয়ে আসা। এ যেন ঐশ্বররিক ইশারার কাকতালীয় ঘটনা! জুলাই আন্দোলনে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার বিলকুকরি গ্রামের শহীদ ইকরামুল হক সাজিদ ও তার বাবা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ওয়ারেন্ট অফিসার জিয়াউল হকের বেলায় ঘটেছে এমন বিরল ঘটনা। গত বছর জুলাই আন্দোলনে আহত সাজিদ ওই বছরেরই ১৪ আগস্ট সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এক বছর ১০ দিনের মাথায় রোববার (২৪ আগস্ট) বাবা জিয়াউল হক ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সিএমএইচে ভর্তি অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্নালিল্লাহে—–রাজিউন)।
জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি ধনবাড়ী উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক ও শহীদ সাজিদের চাচাতো ভাই সাইদুল ইসলাম আপন এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহত হয়ে সিএমএইচ এ চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ দিকে সিসিসি বিভাগের যে বিছানায় সাজিদ শুয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সিসিসির ঠিক সেই বিছানাতে শুয়ে বাবা জিয়াউল হক মারা গেছেন।
গত ৩ আগস্ট থেকে ২০ দিন চিকিৎসাধীন ছিলেন ক্যান্সারে আক্রান্ত সাজিদের বাবা জিয়াউল হক। একমাত্র ছেলে ইকরামুল হক সাজিদের মৃত্যুর পর থেকে নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল ছিলেন না। চিন্তায় তার শরীর ভেঙ্গে গিয়েছিল। শরীরে বাসা বেধে ছিল নানা রোগ ও উপসর্গ। বেখেয়ালি হয়ে পড়েন তিনি। মরণব্যাধি ক্যান্সারের উপস্থিতি আবিষ্কার হয়। দিন দিন শরীর খারাপ হয়ে পড়লে ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে যাওয়া হয় ৩ আগস্ট। অন্তিম পর্যায়ে কাকতালীয়ভাবে জাযগা হয় সিসিসি ইউ’র একই সিটে। রোববার সকালে তার মৃত্যু হয়। এনসিপি নেতা আপন আরও জানান, মৃত্যুর পর তাকে যে অ্যাম্বুলেন্সে বাড়িতে নিয়ে আসা হয় অ্যাম্বুলেন্সের চালক জগদিস বাড়িতে এসে বুঝতে পারেন এক বছর আগে সাজিদের লাশ তিনিই একই অ্যাম্বুলেন্সে বহন করে নিয়ে এসেিেছলেন।
উল্লেখ্য, ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা সাজিদ জগন্নাথ বিশ্বিবিদ্যালয়ের এমবিএ’র ছাত্র ছিলেন। ৪ আগস্ট আন্দোলনের সময় মিরপুর ১০ নম্বর গোল চক্কর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ওইদিনই সিএইচএম এ ভর্তি করা হয় তাকে। অবস্থা খারাপ হয়ে ১৪ আগস্ট সিসিসিইউর সিটে থেকে তিনি ইন্তেকাল করেন। ছেলের মৃত্যুর তারিখ (১৪ আগস্ট) অতিক্রম করে ১০ দিন পর ২৪ আগস্ট একই বিছানায় শুয়ে ছেলের পথে অন্তিম যাত্রা করলেন।
এদিকে গত বছর ১৫ আগস্ট বাঐজান প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত শহীদ সাজিদের জানাজা নামাজে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা ও বর্তমান এনসিপি’র কেন্দ্রীয় আহবায়ক নাহিদ ইসলাম অংশ নিয়ে ছিলেন। জানাজা নামাজ পড়িয়ে ছিলেন সাজিদের বাবা জিয়াউল হক। এক বছর পর রোববার বিকেলে ছেলের জানাজা নামাজ পড়ানো সেই বাবার জানাজা হলো। প্রয়াত জিয়াউল হকের জানাজা নামাজ পড়িয়েছেন ভাই শাহামত আলী। এতে ধনবাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন মাহমুদ, ওসি এস.এম শহীদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপি ও জামায়াত নেতাকর্মী, এনসিপির মধুপুরের সমন্বয়ক সবুজ মিয়া, ধনবাড়ীর সাইদুল ইসলাম আপনসহ জেলার নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সাজিদের কবরের পাশেই বাবা জিয়াউলকে দাফন করা হয়েছে।