ঢাকা ০৫:৩৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিজ কার্যালয়ে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ, পাশে চিরকুট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শালবনবার্তা২৪.কম
  • আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে

মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিলেন এএসপি পলাশ সাহার স্ত্রী। হাত তোলার এমন ঘটনা মেনে নিতে না পেরে দুপুরেই চট্টগ্রামে ‘আত্মহত্যা’র পথ বেছে নিয়েছেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহা। এমন দাবি করেছেন আত্মঘাতী এএসপির বড় ভাই নন্দ লাল সাহা।

তিনি বলেন, “দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিবাহ হয়। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকেই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করত। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকত, এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারত না। সে সব সময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ দিত। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইত না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসত।”

নন্দ লাল সাহা আরও বলেন, “বুধবার (৭ মে) সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।”

আজ দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত র‍্যাব-৭-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট উদ্ধার হওয়ায় এটি আত্মহত্যা কি না, তা ঘিরে তদন্ত চলছে।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা বা বউ কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এ পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৩৭তম বিসিএসে তিনি পুলিশ ক্যাডার হন। এর আগে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।

চট্টগ্রাম র‍্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেন বলেন, “বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত এএসপি পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অস্ত্র ইস্যু করে তিনি নিজের অফিস রুমে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর একটি শব্দ শুনে কর্তব্যরত অন্য র‍্যাব সদস্যরা তার কক্ষে যান এবং তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ওই সময় তার নামে ইস্যুকৃত পিস্তল নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটি গুলির আঘাত কি না, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।”

 

শালবনবার্তা২৪.কম/এআর

 

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

error: Content is protected !!

নিজ কার্যালয়ে সিনিয়র এএসপির গুলিবিদ্ধ মরদেহ, পাশে চিরকুট

আপডেট সময় : ০৮:১৯:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ মে ২০২৫

মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তুলেছিলেন এএসপি পলাশ সাহার স্ত্রী। হাত তোলার এমন ঘটনা মেনে নিতে না পেরে দুপুরেই চট্টগ্রামে ‘আত্মহত্যা’র পথ বেছে নিয়েছেন পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহা। এমন দাবি করেছেন আত্মঘাতী এএসপির বড় ভাই নন্দ লাল সাহা।

তিনি বলেন, “দুই বছর আগে ফরিদপুরের চৌধুরীপাড়ায় পলাশের বিবাহ হয়। বিয়ের ৬-৭ মাস পর থেকেই পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা পরিবারে ঝামেলা করত। আমার মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামে থাকত, এটা পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারত না। সে সব সময় মাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য পলাশকে চাপ দিত। পলাশ কিছুতেই মাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিতে চাইত না। সে মা ও তার স্ত্রী দুজনকেই ভালোবাসত।”

নন্দ লাল সাহা আরও বলেন, “বুধবার (৭ মে) সকালে সামান্য বিষয় নিয়ে আমার মা ও ভাইয়ের গায়ে হাত তোলে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা। এটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি আমার ভাই। আর এ কারণেই আমার ভাই আত্মহত্যা করেছে বলে আমাদের ধারণা।”

আজ দুপুরে চট্টগ্রামের চান্দগাঁওয়ে অবস্থিত র‍্যাব-৭-এর ব্যাটালিয়ন সদর দফতর থেকে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলে একটি চিরকুট উদ্ধার হওয়ায় এটি আত্মহত্যা কি না, তা ঘিরে তদন্ত চলছে।

চিরকুটে লেখা ছিল, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা বা বউ কেউ দায়ী নয়। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারিনি। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা কিছু আছে, তা মায়ের জন্য। দিদি যেন সবকিছু কো-অর্ডিনেট করে।”

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৩৭ বছর বয়সী এ পুলিশ কর্মকর্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। ৩৭তম বিসিএসে তিনি পুলিশ ক্যাডার হন। এর আগে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে কর্মরত ছিলেন।

চট্টগ্রাম র‍্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ. আর. এম. মোজাফফর হোসেন বলেন, “বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত এএসপি পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অস্ত্র ইস্যু করে তিনি নিজের অফিস রুমে প্রবেশ করেন। কিছুক্ষণ পর একটি শব্দ শুনে কর্তব্যরত অন্য র‍্যাব সদস্যরা তার কক্ষে যান এবং তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পান। ওই সময় তার নামে ইস্যুকৃত পিস্তল নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়।”

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন বলেন, “দুপুর ১২টার দিকে পলাশ সাহাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের পাশে একটি গর্তের মতো চিহ্ন রয়েছে, যেখান থেকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এটি গুলির আঘাত কি না, তা ময়নাতদন্ত ছাড়া নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।”

 

শালবনবার্তা২৪.কম/এআর