রাশিয়ার তেল আমদানি নিয়ে ভারতকে শুল্কে চাপে ফেলল যুক্তরাষ্ট্র

- আপডেট সময় : ০৮:১৫:২৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট ২০২৫ ২০ বার পড়া হয়েছে

রাশিয়ার অপরিশোধিত তেল আমদানিকে ঘিরে যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ভারত ও চীনের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ভিন্ন। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে চাপ সৃষ্টির অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি ভারতের ওপর কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিলেও চীনের ক্ষেত্রে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ এখনো গ্রহণ করেননি। এই অবস্থানকে ঘিরেই আন্তর্জাতিক মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে।
চলতি আগস্ট মাসের শুরুতে ভারতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান ট্রাম্প প্রশাসন। এর ফলে মোট শুল্কহার দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। হোয়াইট হাউসের দাবি, সস্তা রাশিয়ান তেল কিনে ভারত কার্যত মস্কোর যুদ্ধ কার্যক্রমে অর্থ জোগাচ্ছে। শুধু তাই নয়, আমদানিকৃত ওই তেল প্রক্রিয়াজাত করে পুনরায় রপ্তানি করায় ভারতীয় কোম্পানিগুলো বিপুল লাভবান হয়েছে—যার পরিমাণ ১৬ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, একই সময়ে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় তেল ক্রেতা চীন কোনো শাস্তির মুখে পড়েনি। চীনের শুল্ক কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে দেশটি রাশিয়া থেকে ১০৯ মিলিয়ন টন অপরিশোধিত তেল কিনেছে, যা তাদের মোট আমদানির প্রায় পাঁচভাগের এক ভাগ। তুলনামূলকভাবে ভারতের আমদানি ছিল ৮৮ মিলিয়ন টন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, যুদ্ধ শুরুর আগে ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ছিল এক শতাংশেরও কম, অথচ এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশে। তিনি এই প্রবণতাকে ‘আর্বিট্রাজ ব্যবসা’ হিসেবে অভিহিত করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, চীনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে না পারার পেছনে দুটি বড় কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিরল খনিজ পদার্থে যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল নির্ভরশীলতা। গাড়ি উৎপাদন থেকে শুরু করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও সামরিক প্রযুক্তি—প্রায় সব ক্ষেত্রেই চীনের সরবরাহ গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, বড়দিনের বাজারকে সামনে রেখে বিপুল চীনা পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকছে। এই মুহূর্তে শুল্ক বাড়ালে সরাসরি ভোক্তাদের খরচ বেড়ে যাবে, যা প্রশাসন এড়িয়ে যেতে চাইছে।
এ ছাড়া সম্প্রতি ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে আংশিক শুল্কবিরতি কার্যকর হয়েছে। দুই দেশই বৈশ্বিক বাজারে স্থিতিশীলতার বার্তা দিতে চাচ্ছে। তবে সমালোচকরা বলছেন, এই নীতিতে স্পষ্ট বৈপরীত্য রয়েছে। একদিকে ভারতকে শাস্তি দিয়ে কড়া অবস্থান দেখানো হচ্ছে, অন্যদিকে চীনের প্রতি নমনীয়তা প্রদর্শন করা হচ্ছে। হোয়াইট হাউস এখনো জানায়নি, ভবিষ্যতে চীনের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেও মন্তব্য করেছেন, এ বিষয়ে তিনি হয়তো ‘দু-তিন সপ্তাহ পর’ সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
সূত্র: আলজাজিরা