বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনা

- আপডেট সময় : ০৫:০০:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ অক্টোবর ২০২৫ ২১৭ বার পড়া হয়েছে

শিক্ষক জাতি গঠনের দক্ষ কারিগর। বলা হয় শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড। আর সেই মেরুদণ্ড পোক্ত করতে নিরলসভাবে প্রচেষ্টায় মগ্ন শিক্ষক সমাজ। একজন শিক্ষার্থীকে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয় বরং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে যাবতীয় সহযোগিতা করতে সদা জাগ্রত শিক্ষকরা। একজন শিক্ষার্থীকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার দীক্ষা থেকে ক্যারিয়ার গঠন সর্বত্র শিক্ষকের পরম স্নেহ ও কাঁচামিঠা শাসন লেগে থাকে। ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিসরূপ প্রতিবছর এই দিনটিকে পালন করা হয়।
পৃথিবীর সকল দেশের শিক্ষক সমাজের নিকট এই দিনটি অত্যন্ত গৌরব ও মর্যাদার। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে শিক্ষার্থীদের ভাবনাগুলো উপস্থাপন করেছেন – খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
শিক্ষার্থী, আনন্দ মোহন কলেজ, ময়মনসিংহ
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ডিপার্টমেন্ট
“শিক্ষক: মানবতার চিরন্তন আলোকবর্তিকা”
শিক্ষক -শব্দটির প্রতি মানবজাতির সবারই রয়েছে শ্রদ্ধার দৃষ্টি। মহামতি থেলিস থেকে শুরু করে অদ্যবধি পর্যন্ত যে মনীষীগন তাদের জ্ঞানের আলোয় আমাদের পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন, তারা সবাই কোনো না কোনো শিক্ষকের হাতেই গড়া। যুগ যুগ শিক্ষকরা তাঁদের মেধা,প্রজ্ঞা, বুদ্ধির মাধ্যমে আমাদের সমাজের প্রধানতম আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করছে। জন্মের পর থেকেই পৃথিবীকে জানতে ও বুঝতে পারার যে যাত্রা তার শুরুটা শিক্ষকদের হাত ধরেই। আমাদের আবহমান গ্রামবাংলার প্রবাদে বলা হয়,”মা-বাবা বানায় ভূত,ওস্তাদে বানায় পুত”।
আজ বিশ্ববিদ্যালয় পরিমন্ডলে এসে বিশদভাবে বুঝতে পারছি এ প্রবাদের মমার্থ। আমাদের জীবনে একজন শিক্ষকের যে ভূমিকা তার প্রতিদান কখনো, কোনেদিন তাঁর প্রতিদান শোধ করতে পারবো না। পড়াশোনার হাতে খড়ি থেকে শুরু করে আজ দর্শনের শ্রেনীকক্ষ পর্যন্ত এসেও প্রতিটি পদক্ষেপ এ বুঝতে পারছি এই মহা সত্য। আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমি পৃথিবীর সকল শিক্ষককে শ্রদ্ধা জানাই। সকল শিক্ষক পৃথিবীতে যথাযথ মর্যাদায় বাঁচুক। বাংলাদেশের কোনো একজন শিক্ষকেও তাঁর অধিকার প্রাপ্তির জন্য রাস্তায় পড়ে থাকার মতো এমন বিভৎস্য দৃশ্য দেখতে চাইনা।
মো. তুহিন আলম
ফিলোসোফি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
“আলোকিত পথের দিশারী”
আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই, দেখব—প্রতিটি সাফল্যের শেকড় জড়িয়ে আছে শিক্ষকের হাতে গড়া বীজের সাথে। শিক্ষক কেবল পাঠশালার চার দেয়ালে সীমাবদ্ধ নন, তাঁরা জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে আমাদের অনুপ্রেরণা। এক হাতে বই, অন্য হাতে ভালোবাসা নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন আগামী দিনের মানুষ। শাসনের কঠোরতা আর স্নেহের কোমলতা মিলেই তৈরি হয় সেই অমূল্য পাঠ, যা বইয়ের পাতায় লেখা থাকে না, কিন্তু হৃদয়ে গেঁথে যায় আজীবনের জন্য। ৫ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস কেবল একটি দিন নয়, এটি আমাদের কৃতজ্ঞতার প্রতীক।
সমাজে যাঁরা আলো জ্বালান, অজ্ঞতার অন্ধকার ভেদ করে দেখান সঠিক পথ—তাঁদের প্রতি আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা। আসুন, শিক্ষককে শুধুই দিবসে নয়, প্রতিদিন সম্মান করি, কারণ তাঁরা আছেন বলেই আমরা আলো দেখতে পাই, স্বপ্ন দেখতে শিখি, আর মানুষ হয়ে উঠি।
নামঃ আশিক-এ রাব্বি নাবিল
প্রতিষ্ঠানঃ গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা
” বিশ্ব জোড়া পাঠাশালা মোর সবার আমি ছাত্র,
নানান ভাবে নতুন কিছু শিখছি দিবারাত্র। ”
কবির এই পঙক্তির মতই, দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত মানুষ শিখে এবং জীবনের চলার পথে নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শৈশব থেকে শুরু করে বার্ধক্য পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে আমরা কারো না কারো থেকে যেকোনো বিষয়ে শিখে থাকি । আমার মতে তারা সকলেই আমাদের শিক্ষক । প্রত্যেক শিশুর জন্মের পর তার শৈশবের প্রথম শিক্ষক হন তার মা। সন্তান তার মায়ের থেকে শিখে ভাষা, আচার আচরণ, অভ্যাস ইত্যাদী। তারপরে যে বা যারা আমাদের মন সংস্কারপুর্বক প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দান করে আমাদেরকে মানুষের মত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে , তারাই আমাদের প্রকৃত শিক্ষক ।
একজন মা শুধু তার সন্তানকেই পথ দেখাতে পারেন, তবে একজন শিক্ষকই পারে একটা জাতিকে পথ দেখাতে। জাতীয় শিক্ষক দিবসে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই মহর্ষি শিক্ষকদের যারা জাতি গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেদের বিলিয়ে দিয়েছেন। জীবনের প্রতিকূল মুহুর্তেও যারা দেখিয়েছেন আলোর পথ তাদের প্রতি অফুরন্ত শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। সবাইকে”বিশ্ব শিক্ষক দিবস ” এর শুভেচ্ছা।
মো. মারুফ হাসান
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
“শিক্ষক—আলোকিত আগামীকের স্থপতি”
জাতি গঠনের কারিগর শিক্ষক। তাদের নিরলস প্রচেষ্টায় একটি জাতি তার স্বর্নশিখরে আরহন করতে পারে। শিক্ষক মানবতার দিশারী, জ্ঞানের বাতিঘর। তাঁরা আলো ছড়ায় যে আলোয় আলোকিত হয় শত সহস্র গোলাপ। তাঁদের কোমল স্নেহ, স্নেহাশিস শাসন ও অনন্য ত্যাগেই গড়ে ওঠে একটি সুগঠিত প্রজন্ম। তাঁরা শুধু পাঠ্য জ্ঞান দেন না, শেখান সত্য, ন্যায় আর নৈতিকতার পথে চলতে। শিক্ষক সেই মহীরুহ, যার ছায়ায় আমরা আশ্রয় পাই, যার আলোয় আমাদের জীবনের পথ আলোকিত হয়। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে আমি গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের।
তাঁদের অবদান কোনো শব্দে পরিমাপ করা যায় না। শিক্ষক নিজের জীবনকে নিবেদন করেন ছাত্র-ছাত্রীদের গড়ে তুলতে, তাঁদের জ্ঞান, বুদ্ধি ও মমতায় আমরা হই আলোকিত মানুষ। শিক্ষক সত্যিই জাতির আত্মাস্বরূপ, জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাতা। তাঁদের প্রতি আমার অন্তহীন ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা।
নাম: আব্দুর রাজ্জাক
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: সরকারি সা’দত কলেজ
বিভাগ: রাষ্ট্রবিজ্ঞান (২০২২–২০২৩ সেশন