মধুপুর জেলা চাই, দাবিতে উত্তাল ফেসবুক

- আপডেট সময় : ০৪:৫১:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ অক্টোবর ২০২৫ ৫৪ বার পড়া হয়েছে

বাংলাদেশের প্রশাসনিক পুনর্গঠনের সাম্প্রতিক প্রস্তাব ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নতুন আলোড়ন। “মধুপুর জেলা চাই”— এই দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফেসবুকসহ নানা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। টাঙ্গাইল জেলার মধুপুর ও আশপাশের এলাকাগুলোর প্রশাসনিক অবস্থান পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
শেখ হাসিনার অপসারণের পর, ২০২৪ সালের ১৭ ডিসেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন দেশের সার্বিক প্রশাসনিক কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবে কুমিল্লা ও ফরিদপুর নামে দুটি নতুন বিভাগ গঠনের পাশাপাশি টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জকে ময়মনসিংহ বিভাগের অধীনে আনার সুপারিশ করা হয়। এই পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে মধুপুরবাসীর দাবি উঠে আসে— আলাদা জেলা গঠন করতে হবে।
সামাজিক মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম বিশেষভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। “মধুপুর জেলা চাই” শিরোনামে ফেসবুকে চালু হয়েছে একাধিক ক্যাম্পেইন, পেজ এবং ডিজিটাল পোস্টার কার্যক্রম। প্রোফাইল ফ্রেম থেকে শুরু করে লাইভ ভিডিও— সবখানেই প্রতিফলিত হচ্ছে স্থানীয়দের জেলা গঠনের দাবির প্রাসঙ্গিকতা।
মধুপুর, ধনবাড়ী, ঘাটাইল ও গোপালপুরের হাজারো মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ কণ্ঠে বলছেন— “জেলা গঠন আমাদের সাংবিধানিক অধিকার।” সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন শতাধিক পোস্ট, মন্তব্য এবং ভিডিওর মাধ্যমে মধুপুরের জনমানস এই দাবিকে সামনে আনছে। অনেকের মতে, মধুপুরের জনসংখ্যা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি সেবা, কৃষি অর্থনীতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বিবেচনায় অঞ্চলটি পূর্ণাঙ্গ জেলার যোগ্যতা রাখে।
স্থানীয় এক সমাজকর্মী বলেন, “টাঙ্গাইল শহরে প্রশাসনিক কাজে যাওয়া আমাদের জন্য কষ্টকর ও ব্যয়বহুল। যদি মধুপুর জেলা হয়, তাহলে সেবা প্রাপ্তি সহজ হবে এবং সামগ্রিক উন্নয়ন তরান্বিত হবে।”
এদিকে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। কেউ কেউ মনে করছেন, ময়মনসিংহ বিভাগের অধীনে আসলে মধুপুরের উন্নয়নগত চাহিদা উপেক্ষিত হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “মধুপুরের ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট একটি নতুন জেলার জন্য অত্যন্ত উপযুক্ত।”
প্রাকৃতিক বনাঞ্চল, মধুপুর জাতীয় উদ্যান, আনারস উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে জাতীয় পরিচিতি— সব মিলিয়ে মধুপুর এখনো অবিকশিত সম্ভাবনার আধার। অথচ সাধারণ জনগণকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে টাঙ্গাইল সদর যেতে হয়। স্থানীয়দের অভিমত— “নিজস্ব জেলা ছাড়া প্রকৃত উন্নয়ন কখনোই সম্ভব নয়।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মধুপুর জেলা গঠনের বিষয়টি সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল। এই দাবি পূরণ হলে, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মধ্য দিয়ে নতুন যুগের সূচনা হবে। অন্যদিকে, এই দাবি উপেক্ষিত হলে, ফেসবুক-ভিত্তিক আন্দোলন আরও বৃহৎ রূপ নিতে পারে।
“মধুপুর জেলা চাই” শুধু একটি স্লোগান নয়, এটি একটি জনগণমুখী দাবি— যা প্রমাণ করে, ডিজিটাল যুগের গণআন্দোলন আজ নীতিনির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।