ঢাকা ০২:২৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ১৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চারুকলার মেধাবী তাপস

বন রক্ষার এক নিরব সৈনিক

এস.এম শহীদ
  • আপডেট সময় : ০৬:৩৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫ ৩৮৩ বার পড়া হয়েছে
দেশের ২৫ ভাগ বন থাকার উপযোগিতার কথা পরিবেশ সম্মত হলেও আমাদের দেশে তার চিত্র যে নেই সেটা সর্বত্র স্বীকার্য। প্রায়শই পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত বন ধ্বংসের প্রতিবেদনে লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, মনুষ্য কারণে এ বন ধ্বংস  হয়েছে,হচ্ছে এবং এই কাজে প্রভাবশালীরা জড়িত। বন ধ্বংস থামানো যাচ্ছে না। বন রক্ষার নানা কাগুজে আয়োজন থাকলেও বন রক্ষার কার্যকরী উদ্যোগ যে বাস্তবে নেই তার হাজারো যুক্তি প্রমাণ মিলবে। রহস্যজনক কারণে আতœঘাতি উদ্যোগের দৃষ্টান্ত অবাক করবে। কথিত বন রক্ষার বৃহৎ আয়োজন সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে তিন দশক আগে আমদানী করা ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি বৃক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের সম্প্রতি নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন অন্তত তার প্রমাণ। তবে বন রক্ষার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এ সময়ে উৎসাহ ব্যঞ্জক ও অনুকরণযোগ্য। নিঃস্বার্থ এমন উদ্যোক্তার নাম তাপস বর্দ্ধন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলার মেধাবী গ্র্যাজুয়েট তাপস টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী গ্রামের প্রয়াত ধীরেন্দ্র বর্দ্ধনের ছেলে। ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করে একমাত্র ইচ্ছা বিশ^দ্যিালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত অভিমানী এই মেধাবী এখন গাছপালা,পশুপাখি ও পরিবেশ নিয়ে দিন কাটান। বিধবা মা, কলেজ শিক্ষক স্ত্রী,একমাত্র মেয়ে আর  সুন্দর পরিবেশ নিয়ে তার সংসার।
বিস্তর জায়গা তার বাড়িতে। বাড়ির চার পাশে গাছের সমাহার। দুর্লভ গাছ গাছড়ায় বেষ্টিত বাড়িতে নানা অভিজাত পাখির কালেকশন। বাড়ির উপরে রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন জাতীয় বনজ গাছের অস্তিত্ব চোখে পড়ার মতো। এই দুই বনজ গাছের বীজ পড়ে বাড়ির আঙ্গিনা ভরে যায়। বছর চারিক আগে হঠাৎই তার ভাবনায় আসে বিশেষ একটি চিন্তা। বীজগুলো েেঝড়ে না ফেলে অস্তিত্ব সংকটের মধুপুর বনে ছড়িয়ে দিলে তো বন রক্ষার ইনিসিয়ালী একটা চেষ্টা হয়। রাস্তার দুই ধার দিয়ে বীজ ছিটালে অন্তত রাস্তার দুই পাশের বিশেষ সৌন্দর্য তৈরি হলে মানুষের মধ্যে বন রক্ষার চিন্তার বীজ বপন হতে পারে। ভাবনা অনুযায়ী শুরু করেন তিনি।
তাপস জানান, বিগত ৩ বছর যাবৎ এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের বিভিন্ন সময়ে মধুপুর বনে বৃক্ষ জাতীয় গাছের চারার বীজ ছড়িয়ে বন রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি। বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া চারুকলার এই সৃজনশীল তাপস বর্দ্ধন রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন গাছের বীজ ছড়ান। প্রচুর ফল বীজ দেয় গাছ গুলো। প্রাণ বৈচিত্র রক্ষায় গাছ গুলো মধুপুর বনের জন্য বিশেষ ভ’মিকা রাখবে বলে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। প্রতি বছর ২/৩ কেজি রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন বীজ সাথে নিয়ে তিনি বনে ঢুকেন। টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহা সড়কের মধুপুর বনাঞ্চলের ৮/১০ কিলোমিটারের পথ ধরে দুই ধার দিয়ে বীজ ছিাটান তিনি। কখনও ব্যাটারি চালিত আবার কখনও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে প্রতি বছর একাধিকবার বনের রাস্তায় এ কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি নিরবে। এবার সম্প্রতি(২৩ এপ্রিল) এক বন্ধুর মোটরসাইকেলে চেপে বনে গিয়ে এবারের প্রথম দফা কাজটি করেছেন।
তাপস বর্দ্ধন সর্বদা  প্রাকৃতিক বনের মধ্যে সামাজিক বনায়ন, ফসল চাষের ঘোর বিরোধী। ইউক্যালিপটাস,আকাশ মনি,মেহগনিসহ আমদানী করা গাছ বনে লাগানোর সমালোচনা সব সময় করছেন। সাম্প্রতিক মধুপুর বন রক্ষার সরকারি উদ্যোগে তিনি আশ^স্ত হয়েছেন। ইউক্যালিপটাস, আকাশ মনি গাছ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের  ১৫ মে’র প্রজ্ঞাপন আর সরেজমিনে উপদেষ্টার আগমনের বিষয়টি তিনি ইতিবাচক দেখছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইউক্যালিপটাস ও একাশি বা আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন, বিপনণ, চারা পরিবহণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দেশে নিষিদ্ধ হওয়া বৃক্ষ এই প্রথম। দারুণ  প্রশংসনীয় একটা কাজ করেছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা ব্যপকভাবে  প্রচার না করলে কোন লাভ হবেনা। দেশের প্রতিটা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের যে কোন হাট বাজারে গাছের চারা মানেই হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস, মেহগিনি, একাশি। কোন রকম ছাড় না দিয়ে প্রশাসন, বনবিভাগ যদি হাট বাজার গুলো অন্তত এই সিজন মনিটর করে, তবে কিছুটা হলেও কাজে দিবে। নয় পলিথিনের মতই এর ভবিষ্যৎ হবে।
শালবনবার্তা২৪.কম/এআর

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

ট্যাগস :
error: Content is protected !!

চারুকলার মেধাবী তাপস

বন রক্ষার এক নিরব সৈনিক

আপডেট সময় : ০৬:৩৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫
দেশের ২৫ ভাগ বন থাকার উপযোগিতার কথা পরিবেশ সম্মত হলেও আমাদের দেশে তার চিত্র যে নেই সেটা সর্বত্র স্বীকার্য। প্রায়শই পত্রিকা ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত বন ধ্বংসের প্রতিবেদনে লক্ষ্যণীয় বিষয় যে, মনুষ্য কারণে এ বন ধ্বংস  হয়েছে,হচ্ছে এবং এই কাজে প্রভাবশালীরা জড়িত। বন ধ্বংস থামানো যাচ্ছে না। বন রক্ষার নানা কাগুজে আয়োজন থাকলেও বন রক্ষার কার্যকরী উদ্যোগ যে বাস্তবে নেই তার হাজারো যুক্তি প্রমাণ মিলবে। রহস্যজনক কারণে আতœঘাতি উদ্যোগের দৃষ্টান্ত অবাক করবে। কথিত বন রক্ষার বৃহৎ আয়োজন সামাজিক বনায়ন প্রকল্পে তিন দশক আগে আমদানী করা ইউক্যালিপটাস, আকাশমনি বৃক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের সম্প্রতি নিষিদ্ধ করার প্রজ্ঞাপন অন্তত তার প্রমাণ। তবে বন রক্ষার ব্যক্তিগত উদ্যোগ এ সময়ে উৎসাহ ব্যঞ্জক ও অনুকরণযোগ্য। নিঃস্বার্থ এমন উদ্যোক্তার নাম তাপস বর্দ্ধন। রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের চারুকলার মেধাবী গ্র্যাজুয়েট তাপস টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার হাজরাবাড়ী গ্রামের প্রয়াত ধীরেন্দ্র বর্দ্ধনের ছেলে। ঈর্ষণীয় রেজাল্ট করে একমাত্র ইচ্ছা বিশ^দ্যিালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত অভিমানী এই মেধাবী এখন গাছপালা,পশুপাখি ও পরিবেশ নিয়ে দিন কাটান। বিধবা মা, কলেজ শিক্ষক স্ত্রী,একমাত্র মেয়ে আর  সুন্দর পরিবেশ নিয়ে তার সংসার।
বিস্তর জায়গা তার বাড়িতে। বাড়ির চার পাশে গাছের সমাহার। দুর্লভ গাছ গাছড়ায় বেষ্টিত বাড়িতে নানা অভিজাত পাখির কালেকশন। বাড়ির উপরে রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন জাতীয় বনজ গাছের অস্তিত্ব চোখে পড়ার মতো। এই দুই বনজ গাছের বীজ পড়ে বাড়ির আঙ্গিনা ভরে যায়। বছর চারিক আগে হঠাৎই তার ভাবনায় আসে বিশেষ একটি চিন্তা। বীজগুলো েেঝড়ে না ফেলে অস্তিত্ব সংকটের মধুপুর বনে ছড়িয়ে দিলে তো বন রক্ষার ইনিসিয়ালী একটা চেষ্টা হয়। রাস্তার দুই ধার দিয়ে বীজ ছিটালে অন্তত রাস্তার দুই পাশের বিশেষ সৌন্দর্য তৈরি হলে মানুষের মধ্যে বন রক্ষার চিন্তার বীজ বপন হতে পারে। ভাবনা অনুযায়ী শুরু করেন তিনি।
তাপস জানান, বিগত ৩ বছর যাবৎ এপ্রিল, মে ও জুন এই তিন মাসের বিভিন্ন সময়ে মধুপুর বনে বৃক্ষ জাতীয় গাছের চারার বীজ ছড়িয়ে বন রক্ষার চেষ্টা করছেন তিনি। বিশ^বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেয়া চারুকলার এই সৃজনশীল তাপস বর্দ্ধন রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন গাছের বীজ ছড়ান। প্রচুর ফল বীজ দেয় গাছ গুলো। প্রাণ বৈচিত্র রক্ষায় গাছ গুলো মধুপুর বনের জন্য বিশেষ ভ’মিকা রাখবে বলে তিনি এমন উদ্যোগ নিয়ে কাজ করছেন। প্রতি বছর ২/৩ কেজি রক্ত কাঞ্চন ও গর্জন বীজ সাথে নিয়ে তিনি বনে ঢুকেন। টাঙ্গাইল- ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহা সড়কের মধুপুর বনাঞ্চলের ৮/১০ কিলোমিটারের পথ ধরে দুই ধার দিয়ে বীজ ছিাটান তিনি। কখনও ব্যাটারি চালিত আবার কখনও সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে প্রতি বছর একাধিকবার বনের রাস্তায় এ কাজটি করে যাচ্ছেন তিনি নিরবে। এবার সম্প্রতি(২৩ এপ্রিল) এক বন্ধুর মোটরসাইকেলে চেপে বনে গিয়ে এবারের প্রথম দফা কাজটি করেছেন।
তাপস বর্দ্ধন সর্বদা  প্রাকৃতিক বনের মধ্যে সামাজিক বনায়ন, ফসল চাষের ঘোর বিরোধী। ইউক্যালিপটাস,আকাশ মনি,মেহগনিসহ আমদানী করা গাছ বনে লাগানোর সমালোচনা সব সময় করছেন। সাম্প্রতিক মধুপুর বন রক্ষার সরকারি উদ্যোগে তিনি আশ^স্ত হয়েছেন। ইউক্যালিপটাস, আকাশ মনি গাছ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের  ১৫ মে’র প্রজ্ঞাপন আর সরেজমিনে উপদেষ্টার আগমনের বিষয়টি তিনি ইতিবাচক দেখছেন। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইউক্যালিপটাস ও একাশি বা আকাশমনি গাছের চারা উৎপাদন, বিপনণ, চারা পরিবহণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। দেশে নিষিদ্ধ হওয়া বৃক্ষ এই প্রথম। দারুণ  প্রশংসনীয় একটা কাজ করেছে সরকার। এই নিষেধাজ্ঞা ব্যপকভাবে  প্রচার না করলে কোন লাভ হবেনা। দেশের প্রতিটা উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের যে কোন হাট বাজারে গাছের চারা মানেই হাজার হাজার ইউক্যালিপটাস, মেহগিনি, একাশি। কোন রকম ছাড় না দিয়ে প্রশাসন, বনবিভাগ যদি হাট বাজার গুলো অন্তত এই সিজন মনিটর করে, তবে কিছুটা হলেও কাজে দিবে। নয় পলিথিনের মতই এর ভবিষ্যৎ হবে।
শালবনবার্তা২৪.কম/এআর