ঢাকা ০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শান্তিচুক্তি ছাড়া যুদ্ধ থামবে না – প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট শালবনবার্তা২৪.কম
  • আপডেট সময় : ০৭:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৫ বার পড়া হয়েছে

ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে সমঝোতায় পৌঁছানো, কারণ “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর ইউক্রেন তা নয়”—এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আলাস্কায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার (১৭ আগস্ট) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য প্রকাশ করে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়। তবে জেলেনস্কি সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্পের মতে, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তিই ভয়াবহ এই যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র উপায়। তার ভাষায়, “সকলেই বুঝতে পেরেছে যে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই স্থায়ী শান্তিচুক্তিই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক হওয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, “হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর মূল শর্ত।” যদিও তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ইউরোপীয় দেশগুলো ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এ যুদ্ধে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেক সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। এ অবস্থায় ট্রাম্পের মন্তব্য অনেকাংশেই মস্কোর অবস্থানের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পুতিন বারবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা রোধ করাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং অনেক বিষয়ে “প্রায় একমত” হয়েছেন। তার ভাষায়, “আমরা একটি চুক্তির কাছাকাছি আছি, তবে ইউক্রেনকেও এতে সম্মত হতে হবে।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে পারবে না। তিনি উল্লেখ করেন, দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরগুলো রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর গুরুত্বপূর্ণ ঢাল হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য বলেও তিনি জোর দেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যদিকে পুতিনও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পক্ষে মত দিয়েছেন, যদিও তিনি এতে বিদেশি সেনার উপস্থিতির বিরোধিতা করেছেন।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক মস্কোর জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। তবে বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন—যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

error: Content is protected !!

শান্তিচুক্তি ছাড়া যুদ্ধ থামবে না – প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

আপডেট সময় : ০৭:৪০:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ থামাতে সমঝোতায় পৌঁছানো, কারণ “রাশিয়া একটি বিশাল শক্তি, আর ইউক্রেন তা নয়”—এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

আলাস্কায় সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের কাছ থেকে আরও ভূখণ্ড দাবি করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। রোববার (১৭ আগস্ট) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এ তথ্য প্রকাশ করে। বৈঠকের পর ট্রাম্প ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে জানান, পুতিন যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছেন যদি কিয়েভ পুরো দোনেৎস্ক অঞ্চল ছেড়ে দেয়। তবে জেলেনস্কি সেই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।

রাশিয়া ইতোমধ্যেই ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, যার মধ্যে দোনেৎস্কের তিন-চতুর্থাংশ এলাকা অন্তর্ভুক্ত। ট্রাম্পের মতে, শুধু যুদ্ধবিরতি নয়, একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তিই ভয়াবহ এই যুদ্ধ বন্ধ করার একমাত্র উপায়। তার ভাষায়, “সকলেই বুঝতে পেরেছে যে যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তাই স্থায়ী শান্তিচুক্তিই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে অনিচ্ছুক হওয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার পথে বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি লিখেছেন, “হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করাই যুদ্ধ থামানোর মূল শর্ত।” যদিও তিনি সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। ইউরোপীয় দেশগুলো ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে, তবে তারা ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরও জোরদারের আশ্বাস দিয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এটাই সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত। এ যুদ্ধে ইতোমধ্যেই হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেক সাধারণ নাগরিকও রয়েছেন। এ অবস্থায় ট্রাম্পের মন্তব্য অনেকাংশেই মস্কোর অবস্থানের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। পুতিন বারবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সম্ভাবনা রোধ করাই তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

ট্রাম্প এক সাক্ষাৎকারে জানান, তিনি ও পুতিন ভূখণ্ড হস্তান্তর এবং ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং অনেক বিষয়ে “প্রায় একমত” হয়েছেন। তার ভাষায়, “আমরা একটি চুক্তির কাছাকাছি আছি, তবে ইউক্রেনকেও এতে সম্মত হতে হবে।”

অন্যদিকে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া ইউক্রেন কোনো ভূখণ্ড ছাড়তে পারবে না। তিনি উল্লেখ করেন, দোনেৎস্কের স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহরগুলো রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর গুরুত্বপূর্ণ ঢাল হিসেবে কাজ করছে। এছাড়া স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা অপরিহার্য বলেও তিনি জোর দেন।

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি জানান, ন্যায়সঙ্গত শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চয়তা দিতে হবে। অন্যদিকে পুতিনও নিরাপত্তা নিশ্চয়তার পক্ষে মত দিয়েছেন, যদিও তিনি এতে বিদেশি সেনার উপস্থিতির বিরোধিতা করেছেন।

অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, দীর্ঘ সময় পর ট্রাম্প ও পুতিনের বৈঠক মস্কোর জন্য বড় ধরনের কূটনৈতিক সাফল্য। তবে বৈঠকের মাত্র এক সপ্তাহ আগে ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছিলেন—যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।