ওসমান হাদিকে গুলির প্রতিবাদে উত্তাল সারাদেশ
- আপডেট সময় : ১০:৪৯:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৮ বার পড়া হয়েছে

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারাদেশে ফুঁসে উঠেছে ছাত্র-জনতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠন। শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দেশের প্রায় সব জেলাতেই বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, মশাল মিছিল, সড়ক অবরোধসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে এসব কর্মসূচিতে অংশ নেন জুলাই আন্দোলনের যোদ্ধা, ছাত্র সংগঠন, রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ।
লক্ষ্মীপুরে বিক্ষোভ
শুক্রবার রাতে চকবাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে উত্তর তেমুহনী গিয়ে শেষ হয়। ইসলামী আন্দোলন, গণঅধিকার পরিষদ, ছাত্রশিবির ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। শিবির নেতা ফরিদ উদ্দিন বলেন, ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়নি, গুলি করা হয়েছে জুলাই শক্তিকে। অবিলম্বে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।
কুমিল্লায় শিবিরের বিক্ষোভ
কুমিল্লা মহানগর ছাত্রশিবির টমছমব্রিজ থেকে কান্দির পাড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করে। “হাদীর ওপর গুলি কেন, প্রশাসন জবাব চাই” স্লোগানে মুখর ছিল পুরো এলাকা। নেতারা বলেন, প্রকাশ্যে গুলি করে গণতান্ত্রিক কণ্ঠস্বরকে দমন করা যাবে না।
মাদারীপুরে বৃহত্তর রাজনৈতিক শক্তির সমাবেশ
শকুনি লেকপাড়ে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলেন, একজন হাদিকে আক্রমণ করলেই পথ পরিষ্কার হবে- এ ধারণা ভুল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কুড়িগ্রামে সড়ক অবরোধ
বিজয় স্তম্ভ থেকে মিছিল শেষে শাপলা চত্বরে সমাবেশ হয়। বিক্ষোভকারীরা কুড়িগ্রাম-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালান। বক্তারা বলেন, হাদির মাথায় গুলি মানে ছাত্র-জনতার মাথায় গুলি।
জয়পুরহাটে মশাল মিছিল
শহীদ ডা. আবুল কাশেম ময়দান থেকে মশাল মিছিল বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। নেতারা বলেন, হামলা শুধু একজন প্রার্থীর ওপর নয়-এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ভীতি প্রদর্শনের অপচেষ্টা।
রাজবাড়ীতে উত্তাল মশাল মিছিল
প্রেসক্লাবের সামনে থেকে মশাল মিছিল বের হয়ে শহীদ স্মৃতি চত্বরে সমাবেশে মিলিত হয়। বক্তারা বলেন, নির্বাচনের তফসিলের পরই হামলা থেকে পরিষ্কার- নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে কর্তৃপক্ষ।
পটুয়াখালীতে শিক্ষার্থীদের মিছিল
ঝাউতলা থেকে সোনালী ব্যাংক মোড় পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল হয়। বক্তারা বলেন, হাদির ওপর হামলা পূর্বপরিকল্পিত ও নব্য ফ্যাসিবাদী তৎপরতার অংশ। হামলাকারীদের প্রকাশ্যে শাস্তির দাবি তোলেন তারা।
ঝিনাইদহে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র জোটের বিক্ষোভ
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বের হওয়া মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা দ্রুত গ্রেপ্তার না হলে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দেন।
খুলনায় মশাল মিছিল ও সমাবেশ
শিববাড়ি মোড় থেকে মিছিল শুরু হয়। বক্তারা বলেন, হাদির ওপর হামলা শুধু একজন যোদ্ধার ওপর নয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের ওপর হামলা। ইন্টেরিম সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তারা।
কুষ্টিয়া ও কুমারখালীতে আল্টিমেটাম
সরকারি কলেজ মাঠ থেকে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মজমপুর গেটে সমাবেশে বক্তারা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন। কুমারখালীতে আহত জুলাই যোদ্ধারা ঘোষণা দেন- অপরাধীরা গ্রেপ্তার না হলে আবারও মাঠে নামবেন।
বাগেরহাটে এনসিপির বিক্ষোভ
মিঠাপুকুর মোড় থেকে মিছিল বের হয়। নেতারা বলেন, একজন প্রার্থীর নিরাপত্তা না থাকলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কোথায়?
খাগড়াছড়িতে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
পৌর ঈদগাহ ময়দান থেকে মিছিল বের হয়ে শাপলা চত্বরে সমাবেশ হয়। বক্তারা অভিযোগ করেন-ফ্যাসিবাদী দোসররা এখনো সক্রিয়।
ময়মনসিংহে কঠোর হুঁশিয়ারি
টাউন হলে সমাবেশে নেতারা বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত না হলে সারাদেশে কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।
বগুড়ায় ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
সাতমাথায় এনসিপি ও বিভিন্ন সংগঠনের যৌথ সমাবেশে হামলাকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত বলে উল্লেখ করা হয়।
নোবিপ্রবি উপাচার্যের বক্তব্যে আলোড়ন
ফেসবুক পোস্টে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইসমাইল লিখেন, ওসমান হাদি হেরে গেলে হেরে যাব আমরা সবাই। তিনি বলেন, হাদি ন্যায় ও অধিকারের সংগ্রামের প্রতীক, তার ওপর হামলা উদ্বেগজনক।
ঠাকুরগাঁওয়ে এনসিপির বিক্ষোভ মিছিল
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় বড় মাঠে থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। মিছিলে অংশ নেওয়া নেতাকর্মীরা ‘ওসমান হাদীর ওপর হামলার বিচার চাই ‘গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ বন্ধ করো’ এমন নানা স্লোগান দেন। পুরো এলাকায় উত্তাপ ছড়ায় প্রতিবাদের সুরে।
বিক্ষোভ মিছিলে বক্তারা বলেন, ওসমান হাদীর ওপর যে হামলা হয়েছে, এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটা পরিকল্পিত, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভয় দেখানোর অপচেষ্টা। যারা গুলি চালিয়েছে তারা কখনোই একা নয়, তাদের পেছনে আছে শক্তিশালী একটি গোষ্ঠী। যারা রাজনীতির মাঠ দখল করতে চায় আতঙ্ক ছড়িয়ে। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এ দেশে আর রক্তের রাজনীতি চলবে না।হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা হলে তা প্রমাণ করবে এই হামলার নেপথ্যে ক্ষমতার একটি অংশ জড়িত। ওসমান হাদীকে লক্ষ্য করে গুলি মানে আমাদের প্রতিটি কর্মীর বুকের দিকে গুলি তাক করা। আমরা এটা কোনোভাবেই ছাড় দেব না। আন্দোলন বাড়বে, চাপ বাড়বে, সত্য চাপা থাকবে না।
সুস্থতা কামনায় কুড়িগ্রামে দোয়া মাহফিল
দ্রুত সুস্থতায় কামনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার উদ্যোগে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা হয়। শুক্রবার বাদ মাগরিব কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা মডেল মসজিদে এবং এশা নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। দোয়া অনুষ্ঠানে সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এসময় বক্তারা বলেন, শরীফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা এই বর্বর হামলার দ্রুত বিচার দাবি করছি। আল্লাহর রহমতেই মানুষের জীবন রক্ষা পায়। আমরা মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করি তিনি যেন তারাতারি দ্রুত সুস্থ হয়ে আমাদের মাঝে ফিরে আসেন।























