ঘরের কোণে সোনার ফসল,
মধুপুরে মাশরুম চাষে আশা দেখাচ্ছেন রাকিব তালুকদার
- আপডেট সময় : ০৯:৫৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৫ ২৫ বার পড়া হয়েছে

তরুণ প্রজন্মের একটা বড় অংশ চাকরির পেছনে না ছুটে উদ্যোক্তা হতে চায়। তেমনি এক স্বপ্নবাজ তরুণ রাকিব তালুকদার।
শৈশব থেকেই তিনি চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হয়েছেন। দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত হয়ে শৈশবেই পড়াশোনার ইতি টানেন। দীর্ঘদিন থেকেছেন গার্মেন্টস কারখানায়। অতি কষ্টে জীবন চললেও সেখানে ছিলো না স্বাধীনতা। হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও জীবন চালানো ছিলো কঠিন। উপরন্তু করোনার প্রভাবে গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেলে চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে যায় রাকিব। করোনার ভয়াল থাবায় এলোমেলো হয়ে যায় তার জীবন। করোনার আকস্মিক প্রাদুর্ভাবে দিশেহারা হয়ে কি করবেন ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছিলেন না। এমন সময় ইউটিউব ভিডিও তার ভাবনায় আশার সঞ্চার করে। তিনি মাশরুম চাষ নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি দেখেন তা তাকে বেশ আশাবাদী করে। এরপর মাশরুম ও মাশরুম চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন এবং বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে মাশরুম চাষ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাড়িতে ফিরে আসেন। এরপর তার স্বপ্নের শুরু প্রতিষ্ঠা করেন মুসাফির মাশরুম সেন্টার।
লালমাটি সমৃদ্ধ টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার বেরীবাইদ ইউনিয়নের চুনিয়া গ্রামে নিজ বাড়িতে মাত্র ৬০০ টা মাশরুম সিলিন্ডার দিয়ে শুরু করেন মাশরুম চাষ। প্রথম ধাপেই অভূতপূর্ব সাফল্যে তাকে আশাবাদী করে এবং আত্মবিশ্বাস জোগাতে সহায়তা করে। সেই থেকে শুরু এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই। এরপর বাড়ির পেছনে একটি শেড তৈরী করেন এবং সেখানেই সুভ্র ফুল ফোটাতে থাকেন। সময়ের পরিক্রমায় রাকিবের এখন আরেকটি সেড হয়েছেন। বেড়েছে কাজের বিস্তৃতি ও চাপ। তিনি এই ব্যস্ততা হাসিমুখে সয়ে যায়। প্রতি মাসে তার অর্ধ লক্ষ টাকার মাশরুম বিক্রি হয়।
রাকিব তালুকদার জানান, মাশরুম হচ্ছে সুপার ফুড। যা এক সময় অনেকেই ব্যাঙ্গের ছাতা বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। তবে আশার কথা এই প্রচলিত ধারনার পরিবর্তন হচ্ছে। মাশরুমের অনলাইন ও অফলাইন উভয়ে মার্কেট প্লেসে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। সারাদিন কাজ করার পর যখন দেখি পলি ব্যাগে মোড়ানো মাশরুম সিলিন্ডার থেকে মাশরুম উঁকি দিচ্ছে তখন মনটা ভরে যায়। মাশরুম চাষে আলাদা জমি কিংবা সার -কীটনাশকের প্রয়োজন হয় না। ঘরের কোনে স্যাতসেতে পরিবেশে পরম যত্নে বেড়ে উঠে মাশরুম।
রাকিবের সাফল্যের সাথী হচ্ছেন অনেকেই। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন মধুপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে ওষুধিগুন সম্পন্ন মাশরুম। মাশরুম চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছে অনেক তরুণ-তরুনীরা। বেশ দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন মুসাফির মাশরুম সেন্টারে আসছেন মাশরুম চাষে আগ্রহীরা। ধানের খড়, কাঠের গুঁড়া, গমের ভুসি, ধানের তুষ ও পানি মিশিয়ে তৈরি করেন মাশরুম চাষের উপযোগী পরিবেশ। তারপর দীর্ঘ সময় জীবাণুমুক্ত করে রাখা হয় পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ঠান্ডা কক্ষে । ২৮/৩৫ দিন পর প্রস্তুত হয় মাশরুম উৎপাদনের স্পন পেকেট ( সিলিন্ডার) সেখান থেকেই জন্ম নেয় সুপারফুড খ্যাত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর মাশরুম।
মাশরুম নিয়ে রাকিবের রয়েছে সূদুর প্রসারী চিন্তা ভাবনা। তিনি জানান, ভবিষ্যতে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের পাশাপাশি সমাজের তরুণ- যুবকদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে কাজ করবেন।
মাশরুম একটি ঔষুধি গুণসম্পন্ন ছত্রাক। এতে রয়েছে উন্নতমানের প্রোটিন, ভিটামিন, ক্যালসিয়াম ও এন্টিঅক্সিডেন্ট যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ সহ বিভিন্ন জটিল ও কঠিন রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।













